মোংলা সংবাদদাতা : বাগেরহাট জেলায় চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে স্থানীয় রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এ অবরোধ চলে নওয়াপাড়া ও কাটাখালী মোড়ে, যেখানে খুলনা-মোংলা-মাওয়া মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও স্থানীয়রা ব্যানার, ফেস্টুন ও ট্রাক দাঁড় করিয়ে অবস্থান নেন। ফলে মোংলা, খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকাগামী শত শত বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকার মহাসড়কে আটকা পড়ে, আর এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

অবরোধ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, জেলা জামায়াতের আমীর ও সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা রেজাউল করিম, নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, জেলা সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মদ ইউনুস, বিএনপি নেতা শেখ শাহেদ আলী রবি, কামরুল ইসলাম গোরা প্রমুখ। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৪ সাল থেকে বাগেরহাট জেলা চারটি সংসদীয় আসনে বিভক্ত হয়ে আসছে। এর মাধ্যমে জেলার জনগণ দীর্ঘদিন ধরে চারজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে জাতীয় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে আসছেন। কিন্তু আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের কারিগরি টিমের প্রস্তাব অনুযায়ী জেলার আসন সংখ্যা একটি কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়। এ প্রস্তাব প্রকাশের পর থেকে স্থানীয় জনগণ ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন।

প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে এরই মধ্যে বাগেরহাটের রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গঠিত হয়েছে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। তাদের ব্যানারে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, জেলা প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান এবং ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সর্বশেষ ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবেই পালিত হলো বৃহস্পতিবারের সড়ক অবরোধ।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, চার দশকের বেশি সময় ধরে জেলার মানুষ চারটি আসনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। হঠাৎ করে একটি আসন বাদ দিয়ে জেলার মানুষের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম এ সময় বলেন, “আজ যদি নির্বাচন কমিশন তাদের অযৌক্তিক প্রস্তাব প্রত্যাহার না করে, তাহলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। এরপর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করা হবে।”

এদিকে সড়ক অবরোধ কর্মসূচির কারণে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। বিশেষ করে ঢাকাগামী বাস, মালবাহী ট্রাক ও জরুরি পরিবহন দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় যাত্রী ও চালকদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। তবে আন্দোলনকারীরা জানান, জনগণের স্বার্থে তারা সাময়িক এই ভোগান্তি সৃষ্টি করতে বাধ্য হয়েছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন সংখ্যা হ্রাস পেলে জেলার অনেক অংশ রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত হবে এবং উন্নয়ন কর্মকা-েও বৈষম্য তৈরি হতে পারে। এজন্য জনগণের দাবিকে অগ্রাহ্য না করে নির্বাচন কমিশনের উচিত প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা।