পূর্ব সুন্দরবনে চলমান প্রবেশ ও মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় বনরক্ষীদের সাঁড়াশি অভিযানে এক মাসে (জুলাই) ৭০ জন জেলে আটক হয়েছেন এবং জব্দ করা হয়েছে ১৪৮টি মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা।
একইসাথে বিপুল পরিমাণ হরিণ ধরার ফাঁদ, অবৈধ জাল, কাঁকড়া ধরা চারু, কীটনাশক, বিষপ্রয়োগে মারা ফেলা মাছ ও শুঁটকি মাছ উদ্ধার করা হয়েছে।
আটক জেলেদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বন বিভাগ জানিয়েছে, এসব অভিযানের ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষিত হয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এসেছে।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও মৎস্য সম্পদের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য বন বিভাগ প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে প্রবেশ ও মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। চলতি বছর ১ জুন থেকে ৩ মাসের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়।
নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের অংশ হিসেবে জুলাই মাসে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে বনরক্ষীরা মোট ৫৮টি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে দুবলারচর, কচিখালী, শেলারচর, কটকা, কোকিলমনি, চরাপুটিয়া ও আন্ধারমানিকসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে মাছ ধরতে আসা জেলেদের ধরা হয়। অনেকে বনের গভীরে পালিয়ে গেলেও ৭০ জন জেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ছিল ১৩ হাজার ৫৯৮ ফুট হরিণ ধরার মালা ফাঁদ, ২০টি ছিটকা ফাঁদ, ৮২ হাজার মিটার অবৈধ জাল, ১৩ বোতল কীটনাশক, ৩১০ কেজি বিষযুক্ত মাছ, ২২ বস্তা চিংড়ি শুঁটকি, ৩৭৫ কেজি কাঁকড়া এবং ১ হাজার ২৮০টি নিষিদ্ধ কাঁকড়া ধরা চারু। এসব ফাঁদ ও জাল শুধু মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করছে না, বরং বন্যপ্রাণী ও পরিবেশের জন্যও মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠছে। জুলাই মাসে এসব অভিযানে বন অপরাধের ৪৩টি মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৪ জন।
পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, জুন থেকে শুরু হওয়া অভিযানে ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। অসংখ্য হরিণ ধরার ফাঁদ জব্দ হওয়ায় অনেক হরিণ শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এবং অবৈধ জাল ও চারু জব্দের কারণে মাছ ও কাঁকড়ার প্রজননও সুরক্ষিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সুন্দরবন পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, যা শুধু বাঘ, হরিণ বা কুমিরের আবাসস্থলই নয় বরং লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা ও বৈশ্বিক জলবায়ুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বন সংরক্ষণে শুধু বনরক্ষীদের প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়; স্থানীয় জনগণেরও সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন।