দীর্ঘদিন পর আগামী ১ অক্টোবর থেকে খুলনা নগরীতে ফিরে আসছে নতুন আঙ্গিকে ‘নগর পরিবহন’। কেউ কেউ একে বলে টাউন সার্ভিস। নগর পরিবহন লক্কড় ঝক্কড় মার্কা হওয়ার কারণে উপহাস করে কেউ কেউ বলে মুড়ির টিন। অথচ সেই মুড়ির টিন এবার আসছে নতুনভাবে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে দু’টি বাস দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হবে। বিআরটিসির তত্ত্বাবধানে ফুলতলা টু রূপসা পর্যন্ত এ বাস চলবে। মঙ্গলবার সকালে বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অংশীজনের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি দিয়েও খুলনায় চালু হচ্ছে না নগর পরিবহন। ফলে তিন চাকার বাহনে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ নি¤œ আয়ের মানুষ। এছাড়া তিন চাকার বাহনে বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনা, যানজটসহ নানা কারণে নাকাল নগরবাসী। মূলত আর্থিক ক্ষতির কারণে পরিবহন সেবা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা। তাই দ্রুত সড়ক সংষ্কার ও আধুনিক নগর পরিবহনের দাবি নগরবাসীর। সেই দাবির প্রেক্ষিতে কেসিসির প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকার নগর পরিবহন চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, খুলনা শহরে প্রায় ১৭ লাখ মানুষের বাস। বর্তমানে নগরীতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার তিন চাকার বাহন চলাচল করে। আর লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন তিন চাকার বাহনে যাতায়াত করেন। নগর পরিবহন না থাকায় এসব যাত্রীদের মাসে অতিরিক্ত ব্যয় হয় অন্তত এক কোটি টাকা। ৯০ এর দশকে খুলনার দুটি রুট রূপসা থেকে ফুলতলা ও রূপসা থেকে শাহপুর পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বাস চলাচল করতো। আর্থিক ক্ষতির মুখে ২০০৫ সাল থেকে নগর পরিবহন বন্ধ শুরু হয়। গণপরিবহন সংকট নিরসনে ২০১৬ সালের ১১ জুন পাঁচটি দোতলা বাস (ডাবল ডেকার) চালু করলেও অল্পদিনে বন্ধ হয়ে যায় রাষ্ট্রীয় পরিবহন ‘বিআরটিসি’র এ সার্ভিসটি। ২০১৮ সালে শহরের নগর পরিবহন সেবা বন্ধ হওয়ায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। একই বছরে অনুষ্ঠিত হয় খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নির্বাচনী ইশতেহারে ‘নগর পরিবহন’ পুনরায় চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পান। তবে চার বছর ধরে মেয়রের দায়িত্ব পালন করলেও এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ২০১৯ সালে খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির উদ্যোগে ৪টি গণপরিবহন চালু হয়। কিন্তু ইজিবাইক, মাহেন্দ্রা ও সিএনজির সাথে সম্পৃক্ত থাকা প্রভাবশালীদের কাছে হার মেনে সেগুলো ফের বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০২২ সালের আগস্টে ৬টি বাস রাস্তায় নামানো হলেও দু’ মাসের মধ্যে আবারও মুখ থুবড়ে পড়ে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন খুলনা বাস ডিপোতে বরাদ্দকৃত দু’টি বাস নির্ধারণ বিষয়ক অংশীজনের সভায় অংশ নেন কেসিসি প্রধান প্রকৌশলী মো. মশিউজ্জামান খান, সাবেক কাউন্সিলর মাস্টার শফিকুল আলম, খুলনা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুল, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব এডভোকেট হাফিজুর রহমান, নিজাম উর রহমান লালুসহ নাগরিক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অংশিজন হাফিজুর রহমান বলেন, ৪৫ সিট বিশিষ্ট ২টি বাস প্রাথমিক পর্যায়ে চলবে। একটি চলবে ফুলতলা টু রূপসা যশোর রোড দিয়ে। অপরটি চলবে ফুলতলা টু রূপসা খালিশপুর বিআইডিসি রোড হয়ে জোড়াগেট দিয়ে বের হয়ে রূপসায় যাবে। তবে ভাড়া কেমন রাখা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে সফলতা আসলে আরো দু’টি বাস নামানো হবে। সে দু’টি বাস ফুলতলা হয়ে আফিলগেট দিয়ে বাইপাস সড়ক ধরে রূপসা ফেরিঘাটে যাবে।
আরেক অংশীজন সাবেক কাউন্সিলর মাস্টার শফিকুল ইসলাম বলেন, সভায় প্রাথমিক পর্যায়ে দু’টি বাস দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যদি কোন প্রতিবন্ধকতা না আসে তবে আগামী ১ অক্টোবর থেকে বিআরটিসির তত্ত্বাবধানে দু’টি বাস চলাচল করবে। তবে সভায় সিএনজি ও ইজিবাইক সংগঠনের নেতাদের দাওয়াত দেয়া হলেও তারা কেউ ছিল না। যার জন্য প্রশাসক সামনে আরো একটি সভা সবাইকে নিয়ে করবেন। তারপর বাস দু’টি চালু করবেন। তবে এ উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন। একই সাথে প্রশাসককে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।