ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা : পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর, ইন্দুরকানী (জিয়ানগর) নিয়ে পিরোজপুর-১, ভান্ডারিয়া, কাউখালি ও স্বরূপকাঠি নিয়ে পিরোজপুর-২ এবং মঠবাড়িয়াকে পিরোজপুর- ৩ সংসদিও আসন গঠিত। জানা যায়, পিরোজপুর -১ ও ২ আসন পুনর্বিন্যাসের জন্য ইসি সচিবালয়ে আবেদন করা হয় এবং সাথে সাথে পাল্টা আবেদনও করেছেন স্থানীয় বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা। আবেনদকারীরা জানায়, বিগত কয়েকটি নির্বাচনে পিরোজপুর ১ ও ২ আসনের সীমানা নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থে চক্রান্ত করে আসছে। তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য বারবার এই সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই পিরোজপুর সদর এবং নাজিরপুর মিলে পিরোজপুর-১ আসন ছিল। এরপর ১৯৭৯ সালে যখন ইন্দুরকানী পিরোজপুর-১ আসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আসনটি দাড়ায় পিরোজপুর সদর নাজিরপুর এবং জিয়ানগর (ইন্দুরকানী)।
উক্ত সীমানা নিয়ে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পিরোজপুর-১ সংসদীয় আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অত:পর ২০১৪ সালে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হইয়া পিরোজপুর-১ আসনের সীমানা ভেঙে পিরোজপুর-১ আসন থেকে ইন্দুরকানি (জিয়ানগর) উপজেলা পিরোজপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়। যে কারনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসনের সীমানা নির্ধারিত হয় পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর এবং নেছারাবাদ, অন্যদিকে আর পিরোজপুর-২ আসনের সীমানা নির্ধারিত হয় জিয়ানগর, ভান্ডারিয়া ও কাউখালী নিয়ে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুইটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পিরোজপুর ১ ও ২ উভয় আসনের স্থানীয় জনগণের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচন কমিশন পিরোজপুর ১ ও ২ আসনের সীমানা পূর্বের ন্যায় অর্থাৎ পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও জিয়ানগর নিয়ে পিরোজপুর-১ আসন এবং ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও নেছারাবাদ নিয়ে পিরোজপুর-২ আসন পূন:নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে পিরোজপুর-১ আসনের তৎকালীন এমপি শ ম রেজাউল করিম এর স্নেহভাজন আবু সাঈদ মিয়া গং এবং পিরোজপুর-২ আসনের তৎকালীন এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এর স্নেহভাজন কয়েকজন ব্যক্তি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (রিট পিটিশন নং-৭৩৫৭ ও ৭৪৯১/২০২৩) দাখিল করেন। তাদের দায়ের করা রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে মহামান্য হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে সঠিক মর্মে ঘোষণা করে বাদীদের দায়েরকৃত রিট দুটি খারিজ করে দেন। হাইকোর্ট বিভাগের উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল (সিপিএলএ নং-৩০২১/২০২৩) দায়ের করলে শুনানি শেষে আপিল বিভাগও তাদের দায়েরকৃত আপিল খারিজ করে দেন এবং হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। অত:পর মহামান্য আপিল বিভাগের আদেশের বিরুদ্ধে তারা রিভিউ করলে রিভিউ পিটিশনও খারিজ করে দেওয়া হয়। যে কারনে পিরোজপুর-১ আসন (পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর, জিয়ানগর/ইন্দুরকানি) এই তিনটি উপজেলা নিয়ে পূর্বের সংসদীয় আসন তথা মূল সীমানায় ফিরে আসে। পিরোজপুর-১ আসনের সংসদীয় নির্বাচনের ইতিহাস ও জনগণের সুবিধা বিবেচনায় পিরোজপুর-১ সংসদীয় আসনে পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর, জিয়ানগর উপজেলা নিয়ে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করাই অত্র এলাকার জনগণের প্রাণের দাবী। আসন পুনর্বিন্যাস ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চলছে।
ইন্দুরকানী উপজেলা জামায়াতে আমীর মোঃ আলী হোসেন জানান, আমরা ইন্দুরকানীবাসি (জিয়ানগর) বৈষম্যের শিকার হতাম। কিন্তু ইন্দুরকানী উপজেলা এখন পিরোজপুর সদর এর সঙ্গে থাকায় সামাজিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে উপকৃত হচ্ছি। আমাদের দুই উপজেলার ভৌগোলিক দিক ও যাতায়াতও ভালো।’ এ জন্য আমরা বর্তমান বিন্যাস অনুযায়ী পিরোজপুর -১ (পিরোজপুর সদর, নাজির পুর ও ইন্দুরকানী) আসন বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি।