‘মোগো এক সময় সবই ছিল, এখন মোরা পথের ভিক্ষারী হয়ে গেছি। মোগো কৃষি জমি ও বসতবাড়িসহ সব কিছুই এখন নদীর পেটে। এখন শুধু স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছি। এক রাতের ভেতরেই চোখের সামনেই সব নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। মোগো এখন পরের জায়গায় অস্থায়ী ঘর তৈরি করে থাকতে হচ্ছে। মোগো পাশের বাড়ির যারা রয়েছে তারও নদী ভাঙন আতঙ্কে দিন গুনছে। যেকোনো মুহূর্তে তাদেরও বাড়িঘরও শেষ হয়ে যাবে। মোগো যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। স্বামীর কবর পর্যন্ত রাক্ষুসে আড়িয়াল খা কেড়ে নিয়ে গেছে। আমাগো নদী ভাঙনের হাত থেকে আপনারা বাচান।’ নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে এমন আকুতি করে কথাগুলো বললেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সিডিখান এলাকার নতুন চরদৌলত খা গ্রামের নদীর পাড়ের ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা ময়না বেগম। তার মত এমন সব কিছু হারিয়ে আহাজারি করেন শতশত অসহায় মানুষ। এমনকি তাদের শেষ ঠিকানা বসতবাড়িটি খুইয়ে দিশেহাড়া হয়ে পড়েন। এলাকা ও সরেজমিন সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার সিডিখান এলাকার নতুনচর দৌতল খা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আড়িয়াল নদী। গত তিন মাসে একের পর এক আড়িয়াল খা নদীর তান্ডবে ওই গ্রামের কালাম খা, আবদুর রব বেপারী, নুরুল ইসলাম, শাজাহান বেপারী, মাসুদ বেপারী, রিপন বেপারী, শিপন বেপারী, বাবুল বেপারী, সেলিম বেপারী, সাইম বেপারী, হুমায়ন বেপারী, মোতালেব,হোসেন, সিদ্দিক, লিপি, রেনু বেগম, হুগলি বেগম, মহর কাজী, শেফালীসহ শতাধিক পরিবারের ফসলি জমি ও বসতবাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। এ ছাড়া বর্তমানে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নতুন চরদৌলত খা পাকা সড়ক, খানবাড়ি মাদ্রাসা, ৪৪নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতুন চরদৌলত খা জামে মসজিদ, নতুন চরদৌলত খা প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নতুন করে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন দিদার সরদার, ফারুক সরদার, মহাসিন সরদার, নেয়ামুল কাজীর বসতবাড়ি, কুলসুম বেগম, সালেহা খানম, সৌরদ্দী হোসেন, রুবেলসহ অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি। এ নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে সম্প্রতি নতুনচর দৌলত খা গ্রামবাসী আড়িল খা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা আড়িল খা নদী ভাঙন রোধে প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি তোলেন। এবং ভাঙন কবলিত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহব্বান জানান। সিডিখানএলাকার বাসিন্দা নেয়ামুল কাজী জানান, নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনকে অনেকবার বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের জানান, ভাঙন রোধে সকল প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ উল আরেফিন বলেন, নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের শিঘ্রই সহযোগিতা করা হবে।