মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা টানা পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

সরকার বলছে, বাড়িভাড়া পাঁচ শতাংশ (ন্যূনতম ২ হাজার টাকা) দিতে পারবে। তবে শিক্ষক-কর্মচারীরা সেটি মানতে নারাজ। আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি, চলতি বছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া এবং আগামী অর্থবছরে আরও ১০ শতাংশ হারে- তা বাড়ানোর নিশ্চয়তা দিতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি প্রতিনিধিদল। তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কাছে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে বাজেট বরাদ্দ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর্যায়ে থাকা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে ৫ শতাংশ (বাড়িভাড়া) তারা দিতে পারবে এবং সেটি ন্যূনতম দুই হাজার টাকা থাকবে। এখন যেখানে টাকা নেই, সেখানে এর থেকে বেশি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এটা শিক্ষক-কর্মচারীদের জানানো হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা জানিয়েছেন তারা এই প্রস্তাবে রাজি নয়, এটি অগ্রহণযোগ্য।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সামনের অর্থবছরের বাজেটে যেন আরও কিছু শতাংশ বৃদ্ধি করা যায় সেটার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীরা সেই প্রস্তাবে রাজি না। তারা বলেছেন, এখন ১০ শতাংশ দিতে হবে, সামনের বছর ১০ শতাংশ দিতে হবে।

সি আর আবরার আরও বলেন, এটা আমাদের এখতিয়ারের বাইরে। আমরা সেটিতে রাজি হইনি। সংস্থান থাকলে করতে করতাম। এখন বাজেটের যে অবস্থা তাতে ৫ শতাংশের বেশি বাড়ানো যাবে না।

শিক্ষকদের ‘মার্চ টু যমুনা’ স্থগিত : তিন দফার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, যমুনার অভিমুখে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি স্থগিত। আগামীকাল দুপুর ২টা থেকে অনশন কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষকরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তার আগে দুপুরে ‘মার্চ টু যমুনা’ অভিযাত্রা বিকাল ৫টা পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আগামীকাল আমরা অনশন করবো। তারপর আমরণ অনশন। তারপরও যদি আমাদের দাবি না মানে তাহলে আমাদের দেহ জীবিত যাবে না। লাশ যাবে। অধিকারের বিষয়ে আপোষ করবো না। আগামী রোববার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শ্রেণির কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, সরকারের প্রস্তাবিত বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির হার ‘অপর্যাপ্ত ও অবাস্তব’। তারা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে ভাতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সর্বজনীন বদলি নীতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকেও ভাতা সংক্রান্ত ইস্যুতে সমাধান আসেনি। বৈঠককে আই ওয়াশ দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজি।

শিক্ষক নেতা দেলোয়ার হোসেন আজিজি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ৫ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য ভাতার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু আমরা শিক্ষা উপদেষ্টাকে বৈঠকে এখন ১০ শতাংশ এবং পরবর্তী বাজেটে ১০ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। প্রজ্ঞাপনে যা স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকবে এমনটা বলেছি। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোনো কথাই বলেননি। তাই আমরা মনে করি এই বৈঠক আই ওয়াশ।

গত রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ শিক্ষকদের সরাতে গেলে ধস্তাধস্তি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ওই এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে সংগঠনের নেতাদের আহ্বানে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান নেন এবং সেখান থেকে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন।

রোববার ও সোমবার রাতভর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করেন শিক্ষকরা। কেউ প্লাস্টিকের চট বিছিয়ে, কেউ ব্যানার মাথার নিচে দিয়ে রাত কাটান। তাদের দাবি, প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ও আন্দোলন চলবে।