পিরোজপুর সংবাদদাতা : বিগত শাসকরা মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে গলা টিপে হত্যা করেছে। তারা মাদরাসার সার্টিফিকেট এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেটের ভিতরে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। যার ফলে ছাত্ররা আর মাদরাসায় পড়তে আগ্রহী হত না। বেশিরভাগ মাদরাসার ছাত্ররা মাদরাসার পাশাপাশি বিভিন্ন কলেজ ও ভার্সিটিতে পড়ালেখা করত। তারা আলেম পাশের পর বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় চলে যেত। এতে করে অনেক শিক্ষকরা চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কায় অন্যত্র চলে গেছে, মাদরাসা বন্ধ হয়ে গেছে। গত শনিবার ৩ এপ্রিল সকাল ১১টায় “নকলমুক্ত পরিবেশ, পড়বো সোনার বাংলাদেশ” শিরোনামে আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তাফহীমুল কুরআন আলিয়া মাদরাসা মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মিঞা মো. নুরুল হক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামীম সাঈদী। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এর আগে সকাল দশটায় দারুল কোরআন মহিলা মাদরাসার একটি মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ৫২ ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জনসহ সকল আন্দোলনে আলেম ওলামাদের অনেক অবদান রয়েছে। তিনি ২৪ এর আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে, যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, যারা বিভিন্ন রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তিনি তাদের অবদানকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন।
মিঞা মোঃ নুরুল হক বলেন, আজ এখানে এধরনের একটি প্রোগ্রামের চিন্তাও করা যেত না, যদি না চব্বিশ এর বিপ্লব সংঘটিত হতো। তিনি বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি, এ ধরনের প্রোগ্রাম করা হলে সেখানে জঙ্গি নাটক সাজানো হতো।
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, বিগত আমলের শাসকদের প্রধান শত্রু ছিল আলেম ওলামারা। কারণ, তারা জানত আলেম ওলামারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জননগণকে জাগিয়ে তুলবে। তাই তারা আলেমদেরকে প্রতিপক্ষ বানিয়েছে। আলেমদেরকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নানা রকমের নিপীড়ন নির্যাতন করেছে। অনেক নিপীড়ন নির্যাতনের পরে, আল্লাহ দয়া করে আমাদের সন্তানদের আবাবিল রূপে পাঠিয়ে অত্যাচারী জালিম শাসকের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, যারা রক্ত দিয়েছে, তাদের চাওয়া ছিল একটি শোষণমুক্ত সমাজ। আমাদেরকে সেই শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য কাজ করে যেতে হবে। বিগত শাসকরা মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে গলা টিপে হত্যা করেছে। তারা মাদরাসার সার্টিফিকেট এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেটের ভিতরে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। যার ফলে ছাত্ররা আর মাদরাসায় পড়তে আগ্রহী হত না। বেশিরভাগ মাদরাসার ছাত্ররা মাদরাসার পাশাপাশি বিভিন্ন কলেজ ও ভার্সিটিতে পড়ালেখা করত। তারা আলেম পাশের পর পরে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় চলে যেত। এতে করে অনেক মাদরাসা বন্ধ হয়ে গেছে, শিক্ষকর চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কায় অন্যত্র চলে গেছে। বিগত ১৫ বছরে মাদরাসার সার্টিফিকেট দিয়ে কোথাও কোন চাকরি হত না। মাদরাসার সার্টিফিকেটের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। মাদরাসার ছাত্ররা মাদরাসা ছেড়ে চলে যেত। তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। কোন বোর্ডে পাশের হার কত বেশি, কোন বোর্ডে বেশি এ প্লাস পেয়েছে এই নিয়ে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। পড়ালেখা ছিল না শুধু পাশের ছড়াছড়ি ছিল। শিক্ষকদের বেশি নম্বর দিতে বলে দেয়া হত। বেশি নম্বর না দিলে শিক্ষকদেরকে জবাবদিহির মুখে পড়তে হতো। কম নম্বর দেয়া হলে শিক্ষককে প্রশ্ন করা হয়েছে, কেন কম দেয়া হল। কোন শিক্ষকের খাতায় বেশি ফেল করলে তাকে পরবর্তী বছরে খাতা দেয়া হতো না। আমরা এসব আর চলতে দেবো না। আমরা এখন সিদ্ধান্ত নেয়েছি শিক্ষকরা কোনরকম চাপ ছাড়াই খাতা দেখবে। খাতায় যা নম্বর পায় তাই দিবেন। এতে করে ছাত্ররা পড়া লেখা করবে। শিক্ষকদের সম্মান বৃদ্ধি পাবে। নকল বন্ধ হবে।
প্রধান অতিথি শিক্ষকদেরকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করেন, নকল করে পাশ করে যে চাকরি করে তাকি হালাল? যারা হারাম ভাবে চাকরি নিয়ে উপার্জন করে তাদের উপার্জন কি হালাল? তার ইবাদত কি কবুল হবে? তিনি বলেন, চব্বিশ এর সন্তানেরা আমাদেরকে কথা যে সুযোগ করে দিয়েছে, এখন যদি আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযতভাবে পালন না করি, তাহলে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছে জবাব দিতে হবে। তিনি বলেন,
আপনারা আপনাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শেখাবেন নকল করা হারাম, হারাম ভাবে চাকরি নিয়ে উপার্জন করলে তাও হারাম, আর হারাম উপার্জনের অর্থ দ্বারা এবাদত করলে তা কবুল হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শামীম সাঈদী উপস্থিত মাদরাসার শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা হচ্ছেন সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত, শ্রদ্ধাভাজন মানুষ। আপনাদেরকে সমাজের সকলেই সম্মান করে, ভালোবাসে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, আল্লামা সাঈদী ফাজিল ও কামিলকে ডিগ্রি ও মাস্টার্সের সমমানের মর্যাদার জন্য আন্দোলন করেছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। শামীম সাঈদী মাদরাসা শিক্ষকদের নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষার ব্যাবস্থা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে পাশ করা ছিল খুব সহজ; পড়ালেখা ছিল না।