এশিয়া কাপে এবার সুপার ফোরে খেলাই নিশ্চিত ছিল না বাংলাদেশের। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের মধ্যে দুটি ম্যাচে জিতলেও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। তবে শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশকে নিয়েই শেষ চারে পা রাখে শ্রীলঙ্কা। আর সেই শ্রীলঙ্কাকেই সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে হারিয়ে দিলো টাইগাররা। সেই সাথে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে লঙ্কানদের কাছে হারের প্রতিশোধ নেয়ার পাশাপাশি ফাইনালের পথেও একধাপ এগিয়ে গেল লিটন দাসের দল। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে যদি শ্রীলঙ্কা না জিততে পারতো, তাহলে সুপার ফোরে খেলা হতো না বাংলাদেশের। আর সেই শ্রীলঙ্কাকেই সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে হারিয়ে দিলো টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ ৬ বলে ৫ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। দাসুন শানাকার করা শেষ ওভারের প্রথম বলে ৪ মেরে ব্যবধানটাকে ১ রানে নামিয়ে আনলেন জাকের আলী। কিন্তু সেই ১ রান করতে আরও ৪ বল খেলতে হলো বাংলাদেশকে, হারাল আরও ২ উইকেট। তবে সমর্থকদের নিরাশ করেননি নাসুম আহমেদ। পঞ্চম বলটি ব্যাটে লাগিয়েই দিলেন দৌড়। তাতেই শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সুপার ফোরে দুর্দান্ত শুরু করল বাংলাদেশ। শনিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৭ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় অপরাজিত ৬৪ রান করেছেন দাসুন শানাকা। লক্ষ্য তাড়ায় ওপেনার সাইফ হাসান ও মিডল অর্ডারে তাওহিদ হৃদয়ের জোড়া ফিফটিতে ১৯.৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ১৬৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১ রানের মাথায় ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম কোনো রান না করেই বিদায় নেন। পরবর্তীতে সাময়িক সেই চাপ সামলে নেন সাইফ হাসান এবং লিটন দাস। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। তবে সপ্তম ওভারে লিটন ফিরে যান ১৭ বলে ৩ চারে করা ব্যক্তিগত ২৩ রান করে। এরপর সাইফ একাই চার ছক্কার ইনিংস খেলতে থাকেন, তাকে সঙ্গ দেন তাওহীদ হৃদয়। একসময় সাইফ তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক। তবে ৪৫ বলে ৬১ রান করে বিদায় নেন এই ব্যাটার। তার বিদায়ের পর একা হাতে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন হৃদয়। সবশেষ দুই ম্যাচে রান করতে না পারা এই ব্যাটার এদিন তুলে নেন অর্ধশতক। তবে জয়ের ১০ রান বাকি থাকতে ব্যক্তিগত ৫৮ রান করে ফিরে যান হৃদয়। পরে শামীম পাটোয়ারী ১২ বলে ১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। তবে অন্য প্রান্তে ছোট একটি নাটকই বয়ে যায় ততক্ষণে। তাতে জয় পেতে কিছুটা সংশয় হলেও ১ বল বাকি থাকতে জয় তুলে নেয় টাইগাররা। লঙ্কানদের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এবং দাসুন শানাকা। এর আগে, টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা দল নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান সংগ্রহ করে। দলের হয়ে এদিন ৩৭ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় সর্বোচ্চ অপরাজিত ৬৪ রান করেন দাসুন শানাকা। শুরুটা অবশ্য বেশ আক্রমণাত্মক ছিল লঙ্কানদের। উদ্বোধনী জুটিতেই ৪৪ রান তুলে বসেন দুই লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। তাসকিনের করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারের শেষ বলে মিডল ও লেগ স্টাম্পের ওপর থেকে টেনে খেলতে চেয়েছিলেন নিশাঙ্কা, ডিপ মিডউইকেটে সাইফ হাসানের হাতে ধরা পড়ে ১৫ বলে ২২ রান করেন এই ওপেনার। এর কিছুক্ষণ পরই কুশল মেন্ডিসকে সাজঘরে ফেরত পাঠান শেখ মেহেদী হাসান। সাইফের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে ৩৪ রান। কামিল মিশারাকে উইকেটে থিতু হতে দেননি মেহেদী। ১১ বলে ৫ রান করা এই ব্যাটারকে সরাসরি বোল্ড আউট করেন ডানহাতি এই স্পিনার। দারুণ শুরু করা শ্রীলঙ্কা ৬৫ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। সেখান থেকে কুশল পেরেরাকে নিয়ে ছোট একটি জুটি গড়ে তোলেন দাসুন শানাকা। মুস্তাফিজের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে থাকা লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে কুশল ফিরলে ভাঙে তাদের ২৭ বলে ৩২ রানের জুটি। এরপর আসালাঙ্কাকে নিয়ে এগোতে থাকেন শানাকা। ১২ বলে ২১ রান করা আসালাঙ্কা কাটা পড়েন রানআউটে। এরপর ১৯তম ওভারে কামিন্দু মেন্ডিস ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের হয়ে মোস্তাফিজুর নিয়েছেন ৩ উইকেট। এছাড়া মেহেদী হাসান ২টি ও তাসকিন আহমেদ নেন ১টি উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলঙ্কা: ১৬৮/৭, ২০ ওভার (দাসুন শানাকা ৬৪*, কুশল মেন্ডিস ৩৪, পাথুম নিশাঙ্কা ২২, চারিথ আশালঙ্কা ২১; মোস্তাফিজুর রহমান ৩/২০, মেহেদী হাসান ২/২৫, তাসকিন ১/৩৭)।

বাংলাদেশ: ১৬৯/৬, ১৯.৫ ওভার (সাইফ হাসান ৬১, তাওহিদ হৃদয় ৫৮, লিটন দাস ২৩, শামীম হোসেন পাটোয়ারী ১৪*, জাকের আলি অনিক ৯; দাসুন শানাকা ২/২১, হাসারাঙ্গা ২/২২)।

ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: সাইফ হাসান (বাংলাদেশ।