কবির আহমদ, সিলেট ব্যুরো : মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরে দীর্ঘ ৯ দিন ছুটি থাকায় সিলেটের পর্যটন এলাকাগুলোতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার। সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রকৃতিকন্যা জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। জৈন্তাপুরের সারি সারি পাহাড়, বিশাল ঝর্নাধারা, বিছানাপাতা পাথরের উপর দিয়ে প্রবাহমান স্বচ্ছ জলের ধারা, সবুজ চা বাগান- প্রকৃতির এমন মনঃমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সারাবছরই পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে প্রবাসী অধ্যুষিত পুণ্যভূমি সিলেট। আর ঈদ কিংবা অন্য কোন উৎসবের ছুটি মিললে তো কথাই নেই। এবারের ৯ দিনের ছুটিতে দেশী বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় সরগরম থাকবে সিলেট। এ ছুটিতে শতকোটি টাকা ব্যবসা হবে বলে ধারণ করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
প্রতিবার ঈদের ছুটিতে লাখো পর্যটকের আগমন ঘটে সিলেটে। এবারও ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে লাখো পর্যটক বরণ করতে প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাদের প্রত্যাশা আবহাওয়া ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ঈদের ছুটিতে শতকোটি টাকার ব্যবসা হবে। আর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনও সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পর্যটন এলাকার পাশাপাশি হযরত শাহজালাল (রহঃ) ও হযরত শাহপরান (রহঃ) এবং সিলেটের প্রথম মুসলমান হযরত বুরহান উদ্দীন (রহঃ) মাজারেও হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটবে। আর বুরহান উদ্দীন (রহঃ) এর মাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর খোলামেলা পরিবেশে অনেক পর্যটক আসেন নগরীর মেন্দিবাগ এলাকায়।
দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটনের আকর্ষণের শীর্ষে রয়েছে সিলেট। সিলেটের প্রকৃতিকন্যা জাফলং, সাদাপাথর, বিছনাকান্দি, সোয়াম্প ফরেস্ট, রাতারগুল, পান্তুমাই ও দিগন্তজোড়া চা-বাগানের টানে সারাবছরই এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা। এর বাইরে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার জিয়ারতেও অসংখ্য পর্যটক আসেন এই পুণ্যভূমিতে। সিলেটের পর্যটন এলাকার পাশাপাশি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে চায়ের শহর দেখতে পর্যটকদের ভিড় জমে উঠে। মাধবকুন্ড ঝরনার পানি দেখা থেকে কেউও বিরত থাকেন না। সিলেট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেখার পর শেষ মুহূর্তে হাজার হাজার পর্যটক চলে যান সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওড়ে। তাহিরপুর উপজেলায় পর্যটকদের থাকার কোন বোর্ডিং বা রেস্ট হাউস না থাকায় পর্যটকদের থাকতে হয় সুনামগঞ্জ শহরে, এজন্য অনেককে সিট না পাওয়ায় হিমশিম খেতে হয়। আবার অনেক পরিবার নিজ এলাকা থেকে নিয়ে আসা যানবাহনেই রাত্রি যাপন করেন।
এবার ঈদে লম্বা ছুটি পেতে যাচ্ছেন দেশবাসী। রোজা ৩০টি হলে ঈদ হবে পহেলা এপ্রিল। আর ২৯ রোজা হলে ঈদ হবে ৩১ মার্চ। ফলে ঈদের পর ৫ থেকে ৬ দিনের দীর্ঘ ছুটি কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন দেশবাসী। তাই এবার সিলেটে অন্যবারের চেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা। আর এবারের ব্যবসা দিয়ে গেল কয়েক বছরের বন্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতায় যে ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটকদের বরণ করতে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা তাদের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলো সংস্কার করেছেন। পর্যটক আকর্ষণে কেউ কেউ হোটেলে নতুন করে সাজসজ্জাও করেছেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সিলেটের ভাল মানের হোটেলগুলোর প্রায় ৭৫ ভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে।
নগরীর জিন্দাবাজারের হোটেল গোল্ডেন সিটির মহাব্যবস্থাপক মলয় দত্ত মিষ্টু জানান, ইতোমধ্যে তার হোটেলের দুই তৃতীয়াংশ রুম ঈদের পরবর্তী এক সপ্তাহের জন্য বুকিং হয়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাকি রুমও বুকিং হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অগ্রিম বুকিং দিয়ে না আসলে এবার সিলেট এসে পর্যটকরা হোটেল নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি। সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি এটিএম শোয়েব আহমদ জানিয়েছেন, লম্বা ছুটি থাকায় সিলেটে গেল কয়েক বছর থেকে এবার বেশি পর্যটক সমাগম হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সিলেটের পর্যটন ব্যবসায়ীরাও পর্যটকদের বরণ করতে সবধরনের প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ জানান, ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে পর্যটকরা যাতে নির্বিঘেœ বেড়াতে পারেন সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে গাইড রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তারা পর্যটকদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে।
পুণ্যভূমি সিলেটে দেশী বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে পুলিশের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার এএসপি মো. স¤্রাট তালুকদার দৈনিক সংগ্রামকে জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি এবারের ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য মাঠে থাকবে সিলেট জেলা পুলিশ। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ও সিটিএসপির অনেকগুলো টিম থাকবে সকল পর্যটন এলাকায়। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।