নাটোরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কারাবরণকারী রাজবন্দীদের ৭ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর বারোটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ডিসি পার্কে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কারাবরণকারী রাজবন্দীদের স্বীকৃতি, পুনর্বাসন ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতকরণের দাবিতে নাটোরের রাজবন্দীরা সংবাদ সম্মেলন শেষে তারা জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।

তাঁদের দাবির মধ্যে রয়েছে, ৬ আগস্টকে “রাজবন্দী দিবস” ঘোষণা ও উদযাপন, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদে স্পষ্টভাবে “রাজবন্দী” শব্দ ব্যবহার করে স্বীকৃতি প্রদান, রাজবন্দীদের গ্যাজেট প্রকাশ ও সম্মাননা সনদ প্রদান, আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা ও আর্থিক অনুদান নিশ্চিতকরণ, সব মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার, রাজবন্দীদের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তক ও রাষ্ট্রীয় স্মারকে সংরক্ষণ, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিচার ও ভবিষ্যতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা।

তারা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হয়েছিল। কোটাসংস্কারকে কেন্দ্র এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে যে গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল তা ছিল দেশব্যাপী বৈষম্য, দুর্নীতি, অন্যায়, নিপীড়ন ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ প্রতিরোধ। যা রূপ নেয় গণঅত্যুত্থানে, ফলশ্রুতিতে অংশগ্রহণকারী প্রায় ২০ হাজার ছাত্র, সাধারণ জনগণ, এক্টিভিস্ট, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শ্রমিক, রিকশাচালক, পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, নারী, শিশু, আলেম, শিক্ষক, কবি-লেখক, সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, নির্যাতন করে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবরণে বাধ্য করা হয়।

তাঁরা ছিলেন জাতির বিবেক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী কন্ঠ। এই সংগ্রামী মানুষগুলো রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার হয়ে কারাবরণ করেছিলেন কিন্তু তাদের সেই কষ্ট, নির্যাতন, অনিশ্চয়তা আর সাহসিকতার গল্পগুলো আজও মূলধারার আলোচনায় উঠে আসেনি। হাসিনার রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্মমতায় যারা কারাবন্দী হয়েছিলেন তারা আজও নীরবে সহ্য করে চলেছেন অবহেলা, বঞ্চনা ও সমাজের উদাসীনতা। আজ অবধি জুলাই রাজবন্দীদের অনেকেই নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন। শিক্ষা ও কর্মজীবনে প্রতিবন্ধকতা, মানসিক ও শারীরিক ক্ষত, পারিবারিক সংকট ইত্যাদি। বেশিরভাগ রাজবন্দী নির্যাতিত হয়ে সাথে সাথে আটক হোন ফলে তাদের চিকিৎসা না পাওয়ায় আহত হওয়ার কোনো ডকুমেন্টস নেই। তাই রাজবন্দীরা না পেয়েছে আহত স্বীকৃতি না পেয়েছে রাজবন্দী স্বীকৃতি। অন্তবর্তীকালীন সরকার আহত জুলাইযোদ্ধাদের জন্য গ্যাজেট প্রকাশ, এককালীন ও মাসিক সহায়তা, বিভিন্ন দিবসে নানাবিধ উপহার, সম্মাননা স্মারক, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করলেও এতদিনে জুলাইয়ের রাজবন্দীদের জন্য কোনোপ্রকার উদ্যোগ নেয়নি।

অন্যদিকে অন্তবর্তীকালীন সরকার ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্রে ১৬, ১৭ ও ২৩ নং অনুচ্ছেদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর ডাকে ফ্যাসিবাদদের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার উপর দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার, শুম ও মানবতাবিরোধী হত্যকান্ড সহ নানাবিধ বিষয় থাকলেও জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে দায়ের করা মিথ্যামামলার স্পষ্ট কোনো উল্লেখ নেই।

এসময় অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক জুবায়ের, আল আমিন, জামাল উদ্দিন, সারোয়ার রহমান সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।