লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জলাবদ্ধতা শুধু ওই অঞ্চলে অবকাঠামোগত সমস্যা নয়, রূপ নিয়েছে এক মানবিক বিপর্যয়ের। বৃষ্টির মওসুম শেষ হলেও দুর্ভোগ শেষ হয়না এখানকার লাখো মানুষের। ক্যালেন্ডারে ভাদ্রমাস চললেও খুলনা জেলার ডুমুরিয়ায় এখনও চারিদিকে থৈ থৈ পানি, মাঠের পর মাঠ পানিমগ্ন। ফসলী জমি এখন পানির নিচে। হাজার হাজার চিংড়ি মাছের ঘের ও শত শত হেক্টর জমির ধান ক্ষেত ডুবে আছে বৃষ্টির পানিতে। অথচ, পানি বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। দিনকে দিন দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে, বেড়েছে কৃষকের আহাজারি।

জানা গেছে, বিল ডাকাতিয়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল। একসময় এই বিল কৃষি ও মৎস্যজীবী মানুষের জন্য আশীর্বাদ ছিল। আজ সেই বিল খুলনা ও যশোর এলাকার মানুষের কাছে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলের একমাত্র শোলমারী নদী ছাড়া বাকি সব কটিই সম্পূর্ণরূপে ভরাট হয়ে গেছে। বিল ডাকাতিয়ার পানি বের হওয়ার একমাত্র চ্যানেল শোলমারী নদীটি পলি পড়ে আংশিক ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে এসব অঞ্চলে। ডুমুরিয়া উপজেলার খণিয়া ইউনিয়নের ডোমরার বিল, বিস্তীর্ণ কৃষিজমি এখন পানির নিচে। পানির কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতেও থাকতে পারছে না মানুষ। অনেক এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ক্লাস নিতে পারছেন না শিক্ষকরা।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বিএডসির খননকৃত খালগুলো দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ও অপরিচর্য থাকায় খাদগুলোর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ওই এলাকার অন্তত ৩৯টি গ্রামের ফসলি মাঠে সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।

বিলপাটিয়ালা গ্রামের বাসিন্দা দীপঙ্কর মন্ডল বলেন, চারিদিকে প্রচুর পানি। ঘর থেকে নামলেই পানি। আষাঢ় মাস থেকে আমরা পানি বন্ধ। গতবার যে গতিতে পানি নেমেছে সেই গতিতে নামলেও আরও দুই মাস সময় লাগবে। খালগুলোতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।

ডুমুরিয়া প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানান, দীর্ঘ জলাবদ্ধতার কারণে ৫ থেকে ৬টি বিদ্যালয়ের আশপাশ ও সড়ক পানিতে ডুবে আছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, দুই দফায় অতিবর্ষণে ডুমুরিয়ার ১০০ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে থাকায় কাঁচা ফসল মরিচ, আদা, হলুদ, পেঁপে, শিম, তরমুজ, লাউ, টমেটো, উচ্ছে, ঝিঙে প্রভৃতির গাছ মরে যাচ্ছে।

অপরদিকে দুই বছরেও “শোলমারী নদী সংলগ্ন বিল ও আবাসিক এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন” প্রকল্প এর পরিবেশের ছাড়পত্র মেলেনি। ফলে ৪৯ কোটি টাকার এখনও ফাইল বন্দি । সাপ, বিচ্ছু ও পোকামাকড়ের সাথে যুদ্ধ করে জীবন-যাপন করছে পানি বন্দি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার মানুষ। পানি নিস্কাশনের সব পথ বন্ধ হওয়ায় গতবছর অতিবৃষ্টিতে বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার কমপেক্ষ ৬ লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে। এ এলাকার পানি নিস্কাশনে তাৎক্ষনিকভাবে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। নাম দেওয়া হয় “খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় শোলমারী নদীর সাথে সম্পর্কিত বিল ও আবাসিক এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন” প্রকল্প।