গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রানীগঞ্জে এক প্রাচীন স্থাপনা আজও ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছেÑ যা স্থানীয়দের কাছে ‘নীলকুঠি’ নামে পরিচিত। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের এক জীবন্ত স্মারক এই কুঠি, যা শুধু স্থাপত্য নয়, বরং এক সময়ের বেদনাবিধুর ইতিহাসের দলিলও বটে।
রানীগঞ্জ বাজার ও রানীগঞ্জ হাইস্কুলের উত্তরে, শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত এই নীলকুঠি। এর পূর্ব দিকজুড়ে সেই সময় নীলচাষ হতো, আর কুঠিটিই ছিল সেই কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। কালের বিবর্তনে নদীর তীর বদলে গেলেও, কুঠিটির চুলার কিছু অংশ আজও রয়ে গেছে। বর্তমানে, লোহার ফ্রেম, কাঠ ও পোড়ামাটির স্থাপত্যে নির্মিত এই কুঠির অনেকাংশই এখনো অক্ষত। এমনকি, তৎকালীন ব্যবহৃত একটি পালঙ্ক ও একটি চৌকি এখনো ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু এই কুঠির ইতিহাস আরও গভীর। জানা যায়, এটি মূলত ইংরেজদের নির্মাণ নয়। ইতিহাসবিদদের মতে, প্রায় ২০০ একরজুড়ে বিস্তৃত এই দুর্গ সদৃশ স্থাপনাটি নির্মাণ করেছিলেন পর্তুগিজ সেনাপতি এন্টোনিও ডি সিলভা মেঞ্জিস। সময়টা প্রায় ৩০০ বছর আগে, যখন অঞ্চলটি সমুদ্রের অনেক কাছাকাছি ছিল। সেই সময় এটিকে বলা হতো ‘বাণিজ্যকুঠি। পরবর্তীতে, ব্রিটিশরা কুঠিটি দখলে নিয়ে নীলচাষের জন্য ব্যবহার করতে শুরু করে, আর তখন থেকেই এটি পরিচিতি পায় ‘নীলকুঠি’ হিসেবে।
স্থাপনাটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর ৪৫ ফুট উঁচু পর্যবেক্ষণ মিনার। এটি আজও সম্পূর্ণ অক্ষত। প্রচলিত আছে, মিনারের ভেতরের অংশে একসময় একটি শিলালিপি ছিল যা সময়ের সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মিনারের পাশেই রয়েছে ইংরেজ নীলকর চার্লি সাহেবের নামাঙ্কিত একটি দীঘি, যা কালের সাক্ষী হয়ে আজও জল ধারণ করে আছে।
গাজীপুরের ইতিহাসপ্রেমী ও পর্যটকদের কাছে রানীগঞ্জের এই নীলকুঠি এক আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠতে পারে- যদি এটি যথাযথ সংরক্ষণ এবং গবেষণার আওতায় আনা হয়। এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব, যা তরুণ প্রজন্মকে আমাদের অতীত ইতিহাস ও শোষণের অধ্যায়ের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেবে।