এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের নেতা জিএম কিবরিয়া, চেয়ারম্যানের স্ত্রী, আওয়ামী মহিলা লীগের নেত্রী হোসনে আরা বেগম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ জামাল হাওলাদারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে অবহিত করতে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি)। গত ২৩ জুন এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মজিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি নিজেকে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির একজন বীমা গ্রাহক পরিচয় দিয়ে গত ১৯ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক এন্ড আর্থিক বিভাগের (এফআইডি) সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন এই বলে যে, এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইনসিওরেন্স এর চেয়ারম্যান, এমডি এবং চেয়ারম্যানের স্ত্রী বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত করেছেন। এ অর্থ তারা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করেছেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদও ওই আবেদনের সাথে সংযুক্ত করেছেন। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে এফআইডি আইডিআরএকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি দৈনিক সংগ্রাম অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের তথ্যবহুল অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বীমা গ্রাহক মজিবুর রহমান আবেদনেব অভিযোগ করেন, এনআরবি ইসলামিক লাইফ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হওয়ায় সরকারের পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডার ও পলিসি হোল্ডারদের স্বার্থও এতে জড়িত। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও সাবেক ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ ব্যক্তিরা কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে দাবি করা হয়। এ অভিযোগ ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে আলোচিত হয়েছে।

চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম কিবরিয়া, তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম এবং কোম্পানির সিইও শাহ জামাল হাওলাদার মিলে প্রিমিয়ামের টাকা আত্মসাৎ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার করছেন।

মজিবুর রহমান চিঠিতে উল্লেখ করেন, আইডিআরএ পূর্বেই এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বিভিন্ন অনিয়ম, অনুমোদনবিহীন বীমা পরিকল্প বিক্রি, অতিরিক্ত ব্যয়, পলিসি তামাদি, এবং একক প্রিমিয়ামকে মেয়াদি বীমা হিসেবে দেখানোর মতো গুরুতর দুর্নীতির তথ্য তাদের তদন্তে উদঘাটন করে।

ফলে আইডিআরএ কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের ১০ জুন এক চিঠির মাধ্যমে শাহ জামাল হাওলাদারের পুনঃনিয়োগের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। চিঠিতে সিইও’র কর্মকা-কে গ্রাহক স্বার্থবিরোধী ও কোম্পানির জন্য ‘চরম ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করা হয়।

জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের পতনের পরও কীভাবে এই কোম্পানিতে পুরনো প্রভাবশালী নেতারা বহাল থাকেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই বীমা গ্রাহক। ২০২৪ সালের তিনি এনআরবি ইসলামিক লাইফের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। একইসঙ্গে তিনি আত্মসাৎকৃত অর্থ দেশে ফেরতের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার কোম্পানির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছেন।