রাজশাহী মহানগরীতে চুির হয়ে যাচ্ছে ড্রেনের স্লাব বা ঢাকনা। ফলে নিত্য ঘটছে দুর্ঘটনা। ঢাকনা চুরির হিড়িক কোনভাবেই ঠেকাতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে এই ঢাকনা চোর চক্রের সদস্যরা।
এসব ড্রেনের ময়লা পরিষ্কারের সুবিধার্থে বসানো হয়েছিল সাড়ে ছয় হাজারের বেশি কংক্রিটের ঢাকনা। রাসিকের সূত্র বলছে, রাজশাহী মহানগরীতে প্রায় ৩৫৭ কিলোমিটার পাকা সড়কের মধ্যে ২৩৬ কিলোমিটার ড্রেন এবং ১২০ কিলোমিটার ফুটপাত রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রঙিন টাইলস দিয়ে প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ করা হয়, যেখানে ৬,৫০০টির বেশি কংক্রিট ঢাকনা বসানো হয়েছিল। এই প্রকল্পে ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণে ব্যায় হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। এমন বিপুল অর্থ ব্যয় করেও সঠিক তদারকির অভাবে এখন প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এসব ঢাকনা উধাও হচ্ছে। পথচারী আহত হচ্ছে যখন তখন, এমনকি খোলা ড্রেনে পড়ে মৃত্যুও হয়েছে এক শিশুর। এদিকে রাতিরাতি ড্রেনের ঢাকনার ব্যবস্থা হওয়ারও কোনো উপায় নেই বললেই চলে। এবষিয়ে ব্যবস্থা নেয়া বলতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) কর্তৃপক্ষ ২টি মামলা দায়ের করে। নগর পুলিশ ঢাকনা চুরি ঠেকাতে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। সরেজমিনে দেখা যায়, একপ্রকার মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে রাজশাহী নগরীর রঙিন টাইলসে নির্মিত ফুটপাতগুলো। কোথাও জঙ্গলে ঢেকে গেছে, কোথাও লালপতাকা পুতে রেখেছেন এলাকাবাসী। ফুটপাত ছেড়ে হাঁটতে হচ্ছে রাস্তা দিয়ে। ড্রেনের ওপর নির্মিত ফুটপাতের বেশির ভাগ ঢাকনা (স্লাব) চুরি হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি রাজশাহী কলেজের সামনে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় এক ছাত্র ড্রেনে পড়ে গুরুতর আহত হন। ফলে ঝুঁকি নিয়েই ফুটপাত ব্যবহার করছেন পথচারীরা। সামান্য অসতর্ক হলেই ড্রেনে পড়ে যাওয়ার আশংকা।
গত এক বছরে নগরীর বিভিন্ন ফুটপাত ও ড্রেনের ওপর বসানো অধিকাংশ ঢাকনা চুরি হয়ে গেছে। নগরীতে পথচারী বেশি বিপদে পড়েন রাতের বেলায়। বিশেষ করে বিদ্যুতের আলো না থাকলে ঘটে দুর্ঘটনা। আবার বৃষ্টির পানিতে যখন সড়ক তলিয়ে যায় তখনো কিছু পথচারী ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। স্থানীয়রা জানান, সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীদের ড্রেন পরিষ্কারের সময় ঢাকনা খোলার পর পুনরায় না বসানোর কারণে রাতের মধ্যে এগুলো চুরি হয়ে যায়। বিলসিমলা মোড় থেকে সিটি হার্ট পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার ফুটপাতে ৫শ’টিরও বেশি ঢাকনা ইতোমধ্যে উধাও হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সিমেন্ট ও সরু রড দিয়ে তৈরি এই ঢাকনাগুলো চোরেরা ভেঙে লোহার রড ভাঙারির দোকানে বিক্রি করছে। দেখা গেছে, রাজশাহী বাইপাস সড়কের বহরমপুর থেকে কাশিয়াডাঙ্গা রোড পর্যন্ত অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি স্লাব বা ঢাকনা নেই। স্টেশন থেকে লক্ষীপুর পর্যন্ত অন্তত ২০-২৫টি স্লাব চুরি হয়ে গেছে। টিবি হাসপাতালের সামনের সড়কে ১০-১৫টি, উপশহর মোড় থেকে সপুরা পর্যন্ত অন্তত ১৫-২০টি স্লাব গায়েব। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, স্লাব চুরির বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে।
ড্রেনের স্লাব চুরি হওয়া নিয়ে তারাও খুব উদ্বিগ্ন। যে সমস্ত চোরেরা এই স্লাব চুরি করছে তাদেরকে অতি শীঘ্রই আইনের আওতায় আনার জন্য ২টি মামলা করা হয়েছে।