গ্রাম-গঞ্জ-শহর
সীমান্তবাসীর মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ছে
সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে বেপরোয়া বিএসএফ ও খাসিয়ারা
বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও ভারতীয় নাগরিক খাসিয়া। ফলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ছে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী উপজেলায় বসবাসকারীদের মধ্যে।
Printed Edition
বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও ভারতীয় নাগরিক খাসিয়া। ফলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ছে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী উপজেলায় বসবাসকারীদের মধ্যে।
প্রতিনিয়ত সিলেটের সীমান্তবর্তী কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, হবিগঞ্জের সীমান্তবর্তী চুনারুঘাট, মাধবপুর, সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা ধরমপাশায় কখনও বিএসএফ গুলী করে বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করছে আবার কখনও ভারতের উগ্র নাগরিক খাসিয়ারা ধরে নিয়ে গুলী করে হত্যা করছে, আবার মাঝেমধ্যে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তবাসীর মধ্যে উদ্ব্যেগ উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। বারবার বিজিবি ও বিএসএফ’র মধ্যে পতাকা বৈঠক হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
ভারতীয় খাসিয়াদের গুলীতে হত্যার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ৫ জন বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় উদ্বেগজনক। গত ২০২৪ সালে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের পর বিএসএফ বা খাসিয়াদের গুলীতে নিহত হয়েছিলেন ৮ বাংলাদেশী। ফলে সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্ক এবং ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মাঝে। ভুলে কখনও গরু বা ছাগল নিয়ে ঢুকে গেলে বাংলাদেশী নাগরিকদের খাসিয়ারা ধরে নিয়ে গুলী করে হত্যা করে এমন ঘটনা ঘটেই চলছে হরহামেশা।
সর্বশেষ গত ৬ মার্চ রাতে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার মঙ্গলপুর সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলীতে নিহত হন শাহেদ আহমদ। গত রোববার শাহেদ আহমদের লাশ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। নিহত শাহেদ লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মঙ্গলপুর আলুবাড়ি গ্রামের মশাহিদ আলীর ছেলে। জানা যায়, তিনি আরও কয়েকজনের সঙ্গে অবৈধভাবে ভারতীয় এলাকায় প্রবেশ করে চিনি আনতে গেলে ভারতীয় খাসিয়ারা গুলী চালায়, এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। পরবর্তীতে ভারতের মেঘালয় পুলিশ তার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে।
চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা-সুনামগঞ্জ সীমান্তের ধর্মপাশা উপজেলার বাউসারী ও কামাউরা এলাকায় রাজিব সরকারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানান, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, চোরাকারবারীদের দ্বন্দ্বের জেরেই এই হত্যাকান্ড ঘটেছে।
গত ২৬ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ভারতীয় নাগরিকদের হাতে খুন হন আহাদ মিয়া (৪৫)। তিনি কুলাউড়ার দশটিকি ইউনিয়নের নয়াবস্তি গ্রামের বাসিন্দা। জানা যায়, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভারতীয় নাগরিক হায়দার আলী ও তার সহযোগীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পর বিজিবি বিএসএফের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলীতে নিহত হন সাইদুল ইসলাম (২৩)। তিনি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের গামারিতলা গ্রামের জয়নুল আবেদীনের ছেলে। জানা গেছে, সাইদুল সীমান্ত দিয়ে চিনি আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলীতে নিহত হন।
গত ৬ জানুয়ারি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকায় জহুর আলী (৫৫) নামের এক বাংলাদেশী ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি চুনারুঘাট উপজেলার পশ্চিম ডুলনা গ্রামের বাসিন্দা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও সীমান্তের ওপারের ভারতীয় লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ নিয়ে যায়। পরে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়।
সীমান্তে বাড়তে থাকা হত্যাকান্ডের পেছনে মূলত চোরাচালান সিন্ডিকেটগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং আধিপত্য বিস্তারের লড়াই রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়ারা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, যেখানে বাংলাদেশের কিছু চোরাকারবারীরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিজিবি বলছে, সীমান্ত এলাকায় টহল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে লাগাতার হত্যাকান্ড রোধে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের মধ্যে কার্যকর আলোচনা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জরুরি বলে মনে করেন সীমান্তবাসী।