গ্রাম-গঞ্জ-শহর
গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভে উত্তপ্ত মহাসড়ক ॥ ১০ কারখানায় ছুটি
গাজীপুরের শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ নতুন মাত্রা পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে টঙ্গী ও মৌচাক এলাকায় বকেয়া বেতন পরিশোধ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে চার ঘণ্টা ধরে চলা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে।
Printed Edition
গাজীপুরের শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ নতুন মাত্রা পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে টঙ্গী ও মৌচাক এলাকায় বকেয়া বেতন পরিশোধ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে চার ঘণ্টা ধরে চলা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। বিক্ষোভের ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে অফিসগামী যাত্রী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে।শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে টঙ্গী,মৌচাক ও কড্ডা নান্দুন এলাকার ১০ টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম জানান,
টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় বিএইচআইএস অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন না পাওয়ায় সকাল ৮টা থেকে অবরোধ শুরু করেন। তারা দেখতে পান, কারখানার সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ টাঙানো হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কাররখানায় ভাংচুর করে। পরে শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নেন এবং সড়ক অবরোধ করেন।
অন্যদিকে, কালিয়াকৈরের গ্লোবাস কারখানার এক শ্রমিককে মারধরের প্রতিবাদে মৌচাক এলাকায় সকাল ৮টা থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। একই সময়ে বাসন থানার নান্দুন ও কড্ডা বাজারের কেমিও ইউএসএ নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ভোগড়া বাইপাসেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, সকাল থেকে শুরু হওয়া এ অবরোধ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় টঙ্গীতে বেলা ১১টার দিকে এবং মৌচাকে দুপুর ১২টার দিকে তুলে নেওয়া হয়। তবে কয়েক ঘণ্টার বিক্ষোভের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বিক্ষোভের জেরে গাজীপুরের ১০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “শ্রমিকদের দাবি ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে। তিনি জানান, মালিকদের আরো শ্রমিক বান্ধব হতে হবে।”
এদিকে, আসন্ন রমযান ও ঈদকে সামনে রেখে গাজীপুরের শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কা দেখা দেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ। শ্রমিক, মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রেখে সম্ভাব্য উত্তেজনা এড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, শ্রমিকদের সচেতন করতে বিভিন্ন মোটিভেশনাল কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
শিল্পাঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে এবং শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণের পাশাপাশি শিল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে শিল্পাঞ্চল পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। শ্রমিকদের আইনানুগ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের দাবি আদায়ের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।
পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম আরও জানান, শ্রমিকদের গুজব থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো পক্ষ পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে না পারে। তিনি বলেন, “শ্রমিকদের নিয়মিত কাজে উপস্থিত থাকতে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং কারখানার সম্পদ রক্ষার ব্যাপারে তাদের সচেতন করা হচ্ছে।”
তিনি জানান,শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে। কোনো সমস্যা হলে সরাসরি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য শ্রমিকদের আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, দাঙ্গা বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, শিল্পাঞ্চল পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রমিকদের সুবিধার্থে শিল্পাঞ্চল পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে, যেখানে তারা যেকোনো সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য যোগাযোগ করতে পারবেন।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মালিকপক্ষ, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার।
পঞ্চগড়ের ইটভাটায় মোবাইল কোট জরিমানা ভাংচুর বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান
পঞ্চগড়ে ইটভাটায় মোবাইল কোট, জরিমানা, ভাংচুর বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে কেন্দ্রীয় সমিতি ঘোষিত কর্মসুচী অনুযায়ী পঞ্চগড় শহরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে ঢাকা- পঞ্চগড় মহাসড়কে পঞ্চগড় ইট প্রস্ততকারী মালিক সমিতি ও শ্রমিকরা এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
বিক্ষোভ সমাবেশে পঞ্চগড় ইট প্রস্ততকারী মালিক ও শ্রমিকরা এতে অংশ নেন। এসময় বক্তব্য রাখেন,পঞ্চগড় ইট প্রস্ততকারী সমিতির সভাপতি সফিউল্লাহ সুফিসহ ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পঞ্চগড়ে যদি আর একটি ইটভাটা ভাংচুর করা হয়। তাহলে মালিক ও শ্রমিকরা মিলে কঠোর আন্দোলনের যাবার হুশিযারী দেয় তারা। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।