সিলেট ব্যুরোঃ সিলেটে টানা চারদিনের বৃষ্টি ও পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের আসাম ও মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে গণ কয়েকদিন ধরে। সিলেট জেলার চার উপজেলার নিম্নঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে জনজীবনে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি থাকায় বড় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলা সদরে প্রস্তুত করা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থি’তির জন্য ৫৮২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন পানিবদ্ধতা নিরসনে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। গণকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত নগরীর জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, মেজরটিলা, শাহপরাণ, রিকাবিবাজার, বাগবাড়ী, কালিঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কলেজ ভবনের নিচতলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে, তবে এখনো তা অতিক্রম করেনি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গণকাল রোববার ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৩২ মিমি এবং গণ শনিবার সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৬৪ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের কিছু নিচু এলাকা ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়ক-মহাসড়কে পানি উঠায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। জেলা প্রশাসক মো. শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ জানিয়েছেন, এখনো কোনো নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তবে বন্যা পরিস্থিতি থেকে বেচে থাকতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ফটিকছড়ি সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে হালদা,ধুরুং,র্সুাসহ বিভিন্ন খাল নদীর পানি।

গণ কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার দাঁতমারা, নারায়নহাট, ভুজপুর, সুয়াবিল, লেলাং, রোসাংগিরী, সমিতিরহাট,ধর্মপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে রয়েছে বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া গহিরা হেঁয়াকো সড়কের বিভিন্ন স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে গ্রামীণ সড়কগুলো পানিতে ডুবে রয়েছে। পানির স্রোতে ভেসে গেল নাজিরহাট পৌরসভা ও সুন্দরপুর ইউনিয়ন সীমান্তবর্তী হালদা নদীর উপর নির্মিত কাঠের সেুুটি। পারাপারে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুপাড়ের বাসিন্দারা। এদিকে হালদা ধুরুংসহ বিভিন্ন খাল নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। বৃষ্টি অব্যাহত থালে ভয়াবহ বন্যার শংকায় রয়েছেন তারা। এছাড়া নারায়নহাটে কয়েক গ্রামের মানুষ পানিতে বন্দী হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন স্যুতা নিশ্চিত করেন। খালের বাঁধ ভেঙ্গে ধর্মপুর ইউনিয়নর কয়েক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা সোলাইমান আকাশ। বিভিন্ন এলাকায় মাছের ঘের ও ফসলের জমি পানিতে ডুবে গেছে বলে জানা গেছে।

রূপগঞ্জ সংবাদদাতা : কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অন্তত ৪০টি গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৈরী আবহাওয়ার প্রকোপে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বহু টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন কারখানার বর্জ্যযুক্ত পানি এলাকার ড্রেনে মিশে রোগবালাই ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জলাবদ্ধতার কারণে রিকশা ঠেলে চলতে হচ্ছে চালকদের। অনেক শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজে যেতে পারেনি। শ্রমজীবী মানুষরা যেতে পারেননি কর্মস্থল ও কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। উপজেলার নিচু এলাকায় ভবনগুলোর নিচতলা, দোকান ও অফিসে ঢুকে পড়েছে বৃষ্টির পানি। ড্রেন উপচে পড়া আবর্জনা পানির সঙ্গে মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিকে, বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। সরেজমিনে দেখা যায়, ভুলতা, মুড়াপাড়া, গোলাকান্দাইল, আমলাব, ও তারাবোসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বহু গ্রামে বাড়ির ভেতরেই হাটু সমান পানি। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বসুঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকেই গবাদিপশু অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন, কেউ কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

মীরসরাইয়ে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত

‎মীরসরাই সংবাদদাতা: মীরসরাইয়ে টানা দু’দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পুরো উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ। এতে দুর্বিষহ জীবন পার করছে অনেকে। পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেঙে গেছে বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক। ভেসে গেছে আমন ও সবজির ক্ষেত। পানির স্রোতে ভেসে গেছে মৎস্য প্রকল্প মাছ।

‎রোববার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারৈয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই পৌরসভার নি¤œাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, খিলমুরারী ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের, মধ্যম ওয়াহেদপুর, দক্ষিণ ওয়াহেদপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

‎ঢলের পানিতে বড় বড় গর্ণ হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট ও জোরারগঞ্জ-আবুরহাট সড়ক।

মৌলভীবাজারে বাড়ছে নদীর পানি

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা: গেল তিন দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের নদ-নদী, খাল বিল ও হাওরে বাড়ছে পানি। জেলার চারটি প্রধান নদী মনু, ধলাই, কুশিয়ারা ও জুড়ীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ও মনু নদীর চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ বলেন, নদীতে পানি বাড়ছে। আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে আছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক প্র¯‘ত রয়েছে।

রায়পুরে নদীগর্ভে বিলীন হতে

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা: আলতাফ মাষ্টার ঘাট একসময় বিকেল গেলেই মানুষের ভিড়ে কোলাহলে মুখর হয়ে উঠত ঘাটের পাড়। নদীর হাওয়ায় জেগে উঠত প্রাণ, ভেসে আসু স্থানীয়দের হাসির শব্দ। এখন সেখানে শূন্যতা, আতঙ্ক আর নদীভাঙনের ক্রমশ গিলে-ফেলা স্মৃতি।

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনার কোল ঘেঁষা গড়ে ওঠা আলতাফ মাস্টার ঘাট ছিল উপজেলার একমাত্র গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্র। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদীর নৈসর্গিক টান আর স্থানীয় আলতাফ মাস্টারের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই স্থানটি এখন ভাঙনের মুখে। আলতাফ মাস্টার ঘাটের পশ্চিম অংশ থেকে শুরু হয়েছে মাটি সরে যাওয়া। প্রথমে বাঁধের মাটি ভাঙে, তারপর সিঁড়ি, এখন পুরো ঘাট এলাকা হুমকির মুখে।