পাবনা সংবাদদাতা : পাবনা জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো অপরাধের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্থানীয় জনসাধারণ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের অপরাধ দমনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
পাবনা জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলায় খুনের ঘটনায় মোট ৫৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আরও ৩৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, ধর্ষণের ঘটনায় ১৭টি মামলা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৩৫৪টি মামলা রুজু হয়েছে। চুরি ও ডাকাতির ঘটনাও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় সাংবাদিক এবং সমাজকর্মীদের মতে, এই অপরাধের ঊর্ধ্বগতি পাবনার ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন পরিস্থিতি। পাবনা সদর উপজেলা, ঈশ্বরদী, বেড়া এবং সাঁথিয়া উপজেলায় অপরাধের হার সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে, গ্রামাঞ্চলে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে, যা একসময় চলনবিল এলাকায় জলদস্যুদের উপদ্রবের কথা মনে করিয়ে দেয়।
স্থানীয় সূত্র এবং বিভিন্ন মহলের মতে, পাবনার আইনশৃঙ্খলার এই করুণ অবস্থার পেছনে একাধিক কারণ দায়ী। পূর্ববর্তী পুলিশ সুপারের আমলে রাজনৈতিক রেষারেষির কারণে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও, বর্তমান পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে খুন ও অন্যান্য অপরাধের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, পুলিশের তৎপরতার অভাব, বিচার বিভাগের উদাসীনতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতির দুর্বলতা এই অপরাধের বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় আইনজীবী বলেন, “অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হচ্ছে না। অনেক মামলায় আসামীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার অপরাধে জড়াচ্ছে। এছাড়া, পুলিশের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগও রয়েছে।”
এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গোষ্ঠীগত সংঘর্ষও অপরাধ বৃদ্ধিতে ইন্ধন জোগাচ্ছে। সম্প্রতি পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলীতে হতাহতের ঘটনা এবং আওয়ামী লীগ নেতার গুলীবর্ষণের ঘটনায় দুইজন আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
পাবনার সাধারণ মানুষ এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।