শফিকুল ইসলাম, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : গোমস্তাপুরসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ ছিল কাশবন। শরৎ এলে সাদা তুলার মতো কাশফুলে ঢেকে যেত মাঠ, নদীতীর আর খোলা বিলের ধারে ধারে। হালকা বাতাসে দুলে ওঠা কাশফুলের দৃশ্য এক সময় মানুষের মনে এনে দিত প্রশান্তি ও আনন্দ। কিন্তু আজ সেই দৃশ্য প্রায় বিলুপ্ত। সময়ের প্রবাহে, মানুষের অতি ব্যবহার আর প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে কাশফুলের রাজ্য হারিয়ে যাচ্ছে দ্রুত।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা, পাগলা, পূর্ণভবা ও তাড়কি নদীর তীরবর্তী এলাকা ছিল কাশবনের স্বর্গরাজ্য। বিশেষ করে রহনপুর, গোমস্তাপুর, শিবগঞ্জ ও নাচোলের অনেক বিল-ঝিলে শরৎকালে কাশফুলের সাদা সমারোহ চোখে পড়ত। কিন্তু এখন সেখানে দেখা যায় চাষাবাদ, ইটভাটা ও বালু উত্তোলনের দাপট। নদীর দুই তীর দখল হয়ে গেছে বসতবাড়ি ও কৃষিজমিতে। এছাড়া, নদীভাঙন, ভূমি পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয়দের অজ্ঞতাও কাশবনের বিলুপ্তির অন্যতম কারণ।
পরিবেশবিদরা বলছেন, কাশবন শুধু সৌন্দর্যের অংশ নয়, এটি নদীতীর রক্ষাকারী প্রাকৃতিক বাঁধের কাজ করে। কাশগাছের শিকড় নদীর পাড় শক্ত রাখে এবং বন্যা ও ভাঙন প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাছাড়া কাশবনে অনেক পাখি ও ছোট প্রাণীর আশ্রয়স্থল থাকে। কাশফুল বিলুপ্ত হলে পুরো একটি ক্ষুদ্র প্রতিবেশ ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়ে।
রহনপুরের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, “আগে আমাদের এলাকায় শরৎ মানেই কাশফুলের সাদা দোলা। এখন পুরো মৌসুমেও চোখে পড়ে না। চাষাবাদের কারণে জায়গা নেই।”
স্থানীয় কলেজছাত্রী লিপি আক্তার বলেন, “আমরা ছোটবেলায় কাশবনে ঘুরতে যেতাম, ছবি তুলতাম। এখন মনে হয়, কাশফুল শুধু বইয়ের পাতায়ই রয়ে গেছে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলার কোনো নদীতীরে কাশবন সংরক্ষণে এখনো কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। প্রাকৃতিক উদ্ভিদ সংরক্ষণ নীতিমালা থাকলেও তা বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে।
তবে কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, যদি নদীতীর পুনর্বাসন ও অবৈধ দখলমুক্ত করা যায়, তবে স্বাভাবিকভাবে কাশগাছের বিস্তার আবারও বাড়ানো সম্ভব।
একজন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ জানান, “কাশফুল শুধু প্রকৃতির অলংকার নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইকোসিস্টেমের অংশ। এটি বায়ু শোধনে ভূমিকা রাখে, তীর সংরক্ষণ করে এবং জলজ জীববৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখে। কাশবন বিলুপ্ত হওয়া মানে প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষয়।”