হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা : মানিকগঞ্জে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ক মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানমূলক গবেষণা সমীক্ষা শীর্ষক এক সাংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্প্রতি মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বারসিক (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ) মানিকগঞ্জএই সাংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ও বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল চন্দ্র রায়ের সঞ্চালনায় গবেষণাপত্র পাঠ করেন গবেষণা সহকারি গাজী নাফিউর রহমান হিমেল।
জানাযায়, সংস্থাটি গত দুই মাস ধরে মানিকগঞ্জ সদর,ঘিওর,হরিরামপুর ও সিংগাইর এলাকা থেকে ২১ জন কৃষকের ওপর নির্দিষ্ট প্রশ্নমালার আলোকে সমীক্ষা পরিচালনা করে।
কীটনাশক নিয়ে কৃষকরা কি ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়েন এবং পরিবেশের ক্ষতির সম্মুখীন হয় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বারসিক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহারে কৃষকদের ক্যান্সারসহ নানা ঝুঁকির তথ্য আমরা পাই। অন্যায়ভাবে নিষিদ্ধ কীটনাশক ভিন্ন নামে বিক্রির বিষয়টিও পরিলক্ষিত হয়। গবেষণা সমীক্ষায় ৪টি উপজেলা থেকে ২১ জন কৃষকের মধ্যে ১৮ জনকেইা প্রায় একইভাবে পাওয়া গেছে যারা নানা রোগে আক্রান্ত। তারা গত কয়েক বছরে বিভিন্নভাবে আক্রান্ত ও ক্ষতির শিকার হয়েছেন। যেমন-মানিকগঞ্জে ২১ জন কৃষকের প্রাপ্ততথ্য থেকে ব্যবহৃত কীটনাশকের উপরোক্ত তালিকা থেকে কার্বোফুরান, প্যারাকোয়াট, গ্লাইফোসেট, এলুমিনিয়াম ফসফাইড এই ৪টি কীটনাশক সরকারী ভাবে নিষিদ্ধ হলেও ইহা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকরা বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে অধিক ক্ষতিকর কীটনাশক ক্রয় করছেন। এক মৌসুমেই কীটনাশক ক্রয় বাবদ সম্ভব্য তাদের ব্যয় ২৬ হাজার ৭৫৭ টাকা। জমিতে ব্যাবহারে সরাসরি কোন মানুষ মারা যায়নি তবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঘরোয়া ও প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থতার খবর জানা গেছে। এগুলো ব্যাবহারে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। এছাড়াও তাদের ১০টি গরু, ১১টি হাস ও ১টি পুকুরের মাছ মারা যায়। এতেকরে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ১১ লাখ , ৮৮ হাজার ৫ শত টাকা।
তিনি আরো জানান, ২১ জনের সমীক্ষা থেকে সিংগাইর রাজনগর এলাকায় ৫০ বিঘা জমিসহ মোট ৮৭ বিঘা জমিতে অধিক বিপজ্জনক কীটনাশক ব্যাবহারের খবর জানতে পেরেছি।
ভুক্তভোগী কৃষকদের মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, দুর্বলতা, বিভ্রান্তি, উচ্চরক্তচাপ, বিষণ্নতা, উদ্বেগ, খাবারের অরুচি, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, অজ্ঞান হওয়া, স্নায়ু, দুর্বলতা, ত্বকের রোগ, ঘুম কম হওয়া, পা ভারী হয়ে যাওয়া ও বুক ব্যাথাসহ অনেক সমস্যার কথা জানা যায়।
ভূক্তভূগীরা জানান যদিও বড় কোন ডাক্তার বা হাসপাতালে যেতে হয়নি, ঘরোয়া ও প্রাথমিক চিকিৎসায় সেরে গেছে তারপরও তাদের তথ্যমতে প্রাথমিক চিকিৎসাবাবদ ব্যায় হয়েছে প্রায় ১১ হাজার টাকা।
আলোচকরা আরো বলেন-এইসকল সমস্যার অন্যতম কারণ কৃষকদের অসচেতনতা, নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার, বাজারজাত করণ, সংরক্ষণ, বিক্রিতে মনিটরিং না থাকা, কিভাবে ব্যাবহার করতে হয় তা না জানা কৃষি বিভাগ, বিপনন কেন্দ্র সহ কৃষকদের মাঝে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে এগুলো নিয়ে পরিবেশবিদসহ কৃষি বিভাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানানো হয়। এছাড়াও অর্গানিক কৃষিসহ কৃষি প্রতিবেশ চর্চা বৃদ্ধিতে সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা বাড়ানোর সুপারিশ উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বারসিক সভাপতি অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, বারসিক কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামসহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীবৃন্দ।