রাংগুনিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সমাজকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি একদল শিক্ষককে নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। এতে এলাকায় শিক্ষক সমাজের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, পোমরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম টিপু, মরিয়ম নগর হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদা এবং কাউখালি আনোয়ারা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব রাজনৈতিক স্বার্থে শিক্ষকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই তিনজনই পূর্ববর্তী সরকারের সময় বিতর্কিতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। শিক্ষকদের দাবি, তৎকালীন সময়ে প্রভাবশালী সভাপতিদের মাধ্যমে অনিয়মের আশ্রয়ে পদ লাভ করেন তারা।

এলাকার নীতিবান শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষকরা নাগরিক হিসেবে রাজনীতি করতে পারেন, তবে পেশাগত দায়িত্বে অন্যদের জোর করে রাজনীতিতে যুক্ত করা অনুচিত। তাদের মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো নিরপেক্ষ পরিবেশে জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র-সেটিকে দলীয় রাজনীতির মঞ্চে পরিণত করা অনৈতিক ও অশোভন।

শিক্ষক সমাজের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে ওই তিন শিক্ষক নির্বাচনের আগে নির্দিষ্ট দলের এক প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিতে অন্য শিক্ষকদের ওপর চাপ দিচ্ছেন। ফোনে ভয়ভীতি প্রদর্শন, অপমানজনক আচরণ, এমনকি নির্বাচনের আগে এক রাজনৈতিক সভায় উপস্থিত হতে বাধ্য করার ঘটনাও ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, সভায় উপস্থিতির জন্য শিক্ষকদের গাড়ি ভাড়া ও নাস্তার নামে তিন থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষক মহলে আলোচনা চলছে, রাংগুনিয়ায় আগে কখনো শিক্ষক সমাজকে এতটা প্রকাশ্যে দলীয় কাজে ব্যবহার করা হয়নি। অনেকেই মনে করছেন, কয়েকজন শিক্ষক নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে নিরীহ শিক্ষকদের ব্যবহার করছেন।

অভিযোগ আরও রয়েছে, উক্ত শিক্ষক নেতাদের মধ্যে দুইজন অতীতে বর্তমান রাজনৈতিক নেতার বিরোধিতা করেছিলেন, এখন সেই সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্যই শিক্ষক সমাজকে ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে।

স্থানীয় শিক্ষক সমাজ মনে করছে, এভাবে চলতে থাকলে রাংগুনিয়ার শিক্ষা পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভয় ও চাপে অনেকেই প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও, নীরবে এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন শিক্ষকরা।

রাংগুনিয়ার সাধারণ শিক্ষক সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা ইতোমধ্যে দলীয়করণ, ভয়ভীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা এখন সময়ের দাবি।