চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওপর চাপ কমাতে ৫০০ শয্যার আরেকটি হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কর্ণফুলী উপজেলায় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
গতকাল শনিবার দুপুরে তিনি কর্ণফুলী উপজেলার ক্রসিং এলাকায় নতুন উপজেলা ভবনের পাশে উপজেলা হাসপাতাল সংলগ্ন জায়গা পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা মূল্যায়ন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন নূরজাহান বেগম।
এছাড়া আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা ও অগ্রগতির বিষয়েও দিক নির্দেশনা প্রদান করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। পাশাপাশি এই স্থানে হাসপাতাল নির্মিত হলে শুধু কর্ণফুলী উপজেলা নয়, পার্শ্ববর্তী অন্তত তিনটি উপজেলার জনগণসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যসেবায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, একান্ত সচিব ডা. মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. অং সুই প্রু মারমা, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রয়া ত্রিপুরা, কর্ণফুলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছাম্মৎ জেবুন্নেসা প্রমুখ।
কর্ণফুলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছাম্মৎ জেবুন্নেসা বলেন, কর্ণফুলী উপজেলা আট বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রূপে এখানে কোন সরকারি হাসপাতাল নেই। ফলে ডেলিভারিসহ অন্তবিভাগের রোগী ভর্তি হওয়া এবং অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য অত্র এলাকার বাসিন্দাদের পার্শ্ববর্তী উপজেলা অথবা চট্টগ্রাম শহরের উপর নির্ভর করতে হয়। দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশমুখী উপজেলা হওয়াতে অত্র উপজেলায় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলে তা দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় একটি আশীর্বাদ রূপেই আবির্ভূত হবে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সরকারি নির্দেশনা মতে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ১০ একর জায়গা দরকার। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সম্ভাব্য জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন। সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই হাসপাতালটি নির্মাণে আগ্রহী। তাই কাজ দ্রুত শুরু করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই হাসপাতাল নির্মিত হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লাখো মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা পাবে। প্রসঙ্গত, দুই হাজার ২২ শয্যার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন হাজার ৩০০ রোগী ভর্তি থাকেন। হাসপাতালের সক্ষমতার তুলনায় হাজারেরও বেশি রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। চট্টগ্রামের বাইরেও কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দাদের চিকিৎসাসেবার জন্য এই হাসপাতালের উপর নির্ভর করতে হয়।
কিন্তু চমেক হাসপাতালে পৌঁছাতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয় তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর বাসিন্দাদের। যাতায়াত সময়সাপেক্ষ হওয়ায় মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই অনেক সময় মারা যায়। এ অবস্থায় চমেক হাসপাতালে চাপ কমিয়ে বান্দরবান-কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের চিকিৎসাসেবার জন্য নতুন হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালটি নির্মাণ হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লাখো মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাবে।