রেজাউল করিম রাসেল, কুমিল্লা অফিস : কুমিল্লায় গ্রামীণ শতশত কিলোমিটার সড়কে এখনও রয়ে গেছে সেই বন্যার ক্ষত। বছর ঘুরে আবার বর্ষা আসলেও মেরামত হয়নি সড়কের সেই ক্ষতচিহ্ন। পিচ ঢালাই উঠে খানাখন্দ আর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এমন প্রায় ১২শ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন বলে জানান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) কুমিল্লা। সংস্কার যোগ্য এসব সড়ক জনসাধারণ এবং যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরতলী থেকে গ্রাম পর্যন্ত সড়কের স্থানে স্থানে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি দুর্বিষহ রূপ নিচ্ছে। গত বছরের বর্ষা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর উন্নয়ন ও সংস্কার না হওয়ায়, চলতি বছরের ভারী বর্ষণে এই বেহাল অবস্থা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১২শ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে, যেখানে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। কোনো কোনো সড়কে স্বাভাবিক চলাচলও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এসব সড়কের কোনোটি সংস্কারের এক বছরের মধ্যে ফের বেহাল হয়ে পড়েছে, আবার কোনটি এক যুগেরও অধিক সময় ধরে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে না। এতে গর্ত আর খানা-খন্দে ভরা সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কৃষিজীবী,শ্রমজীবী ও স্কুল,কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লাখো মানুষ।

দ্রুত মেরামত যোগ্য এসব সড়কে যানবাহন উল্টে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তারপরও সড়কগুলো সংস্কারে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কার্পেটিং ও খোয়া উঠে গিয়ে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) তথ্যমতে, তাদের অধীনে জেলায় ১০ হাজার ২শ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ১৫শ ৩১ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ছিলো। চলতি অর্থ বছরে ৩৬০ কিলোমিটার সড়কের মেরামত হলেও বাকি রয়েছে ১১শ ৭০ কিলোমিটার পাকা সড়কের সংস্কার কাজ। এছাড়াও জেলার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ স্থানের কাঁচা সড়কগুলোতে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। কাঁচা-পাকা মিলিয়ে জেলার ১২শ কিলোমিটারের অধিক সড়ক ভাঙাচোরা। বেহাল এসব সড়কের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কও রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ১২শ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রামীণ সড়কের বেহাল অবস্থা কুমিল্লা আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ, বরুড়া, চান্দিনা, দেবিদ্বার ও মুরাদনগরে। এসব উপজেলার গ্রামীণ সড়কে দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে আছে। দিন দিন গর্তের সৃষ্টি হয়ে এর গভীরতা বাড়ছে।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গুনবতি এলাকার বাসিন্দা ডা. মঞ্জুর আহমেদ সাকী জানান, চৌদ্দগ্রাম গুনবতী-পদুয়া সড়কটি খানাখন্দে ও গর্তে ভরে গেছে। যানচলাচল করছে অত্যন্ত ঝুকি নিয়ে। শুধু এই সড়ক নয়, দক্ষিণ চৌদ্দগ্রামের প্রায় সকল সড়কের একই অবস্থা। গেল বছরের বন্যায় এ সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পর সংস্কার না করায় এবারের বর্ষায় ভারি বৃষ্টিপাতে সড়কের ক্ষতচিহ্ন মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে কর্মজীবী, স্কুল, কলেজ এবং সাধারণ মানুষ চলাচল করছে।

একই অবস্থায় মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁও থেকে কেয়ারী যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিও। ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক মাসুদ আলম জানান, গেল বছরের ভয়াবহ বন্যায় এ সড়কতে গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। সাথে সাথে মেরামত না হওয়া পাকা সড়কটির পুরো জায়গায় গর্তের আকার বড় হয়ে চলাচলা অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ সড়ক দিয়ে কেয়ারী পঞ্চগ্রাম উচ্চবিদ্যায়, দাঁদঘর কেয়ারী দাখিল মাদ্রাসায় প্রতিদিন শতশত শিক্ষার্থী যাতায়াত করছেন। গুরত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি তাদের।

এলজিইডি কুমিল্লার সহকারী প্রকৌশলী দীপু সূত্রধর বলেন, গত বছরের ভয়বহ বন্যায় প্লাবিত এবং অতি বৃষ্টির কারণে জেলার ১৫শ ৩১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সংস্কারের প্রয়োজন এমন গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো চিহ্নিত করে চলতি বছরের বরাদ্দকৃত অর্থে ৩৬০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। যাহা এখনও চলমান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মধ্যে এখনও ১১শ৭০ কিলোমিটার বাকি রয়েছে। যা খুব দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। এসব সড়ক উন্নয়নে সরকারকে বাজেট দেয়া হয়েছে। অর্থ পেলেই দ্রুত সংস্কারের কাজ শুরু হবে।