‘দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি—প্রাণিসম্পদ হবে উন্নতি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মোংলা উপজেলায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলা ২০২৫ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকালে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে স্থানীয় খামারি, শিক্ষার্থী এবং প্রাণিসম্পদ খাতের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার সুমন সরকার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার সুমী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার প্রশান্ত হাওলাদার এবং উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের যৌথ আয়োজনে এবং প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

কেক কেটে উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথি শারমিন আক্তার সুমী বলেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদ খাত এখন একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে অবদান রাখছে। তিনি জানান, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নতমানের দেশীয় ও সংকর জাতের সঠিক ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ও রোগনিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে খামারিরা আরও উৎপাদনশীল হতে পারবেন এবং একই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, খামারিদের দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সুবিধা প্রদানে সরকার নিয়মিত উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে।

মেলায় বিভিন্ন জাতের গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, আধুনিক খামার প্রযুক্তি, পুষ্টি ব্যবস্থাপনা, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি নিয়ে বিশেষ স্টল স্থাপন করা হয়। দর্শনার্থীরা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সরাসরি পরামর্শ গ্রহণ এবং বাস্তব প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান।

স্থানীয় খামারি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, এ ধরনের প্রদর্শনী ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তিনি বলেন, আধুনিক পশুপালন, রোগ প্রতিরোধ এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এখানে হাতে-কলমে শিখতে পারা তাদের উৎপাদন বাড়াতে বাস্তব সহায়তা করছে।

এদিকে প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া কলেজ শিক্ষার্থী সাবিহা আক্তার জানান, এটি তার প্রথম প্রাণিসম্পদ মেলা অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন জাতের পশু, খামার প্রযুক্তি এবং নতুন পদ্ধতি সরাসরি দেখার সুযোগ পাওয়ায় তিনি বেশ উৎসাহিত হন। তার মতে, শিক্ষার্থীদের বাস্তব জ্ঞান অর্জনের জন্য এ ধরনের আয়োজন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

মেলায় সফল খামার উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় সেশন, বিনামূল্যে পশু চিকিৎসা সেবা এবং সরকারি ঋণ সুবিধা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা হয়। আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেন, এ ধরনের কার্যক্রম প্রাণিসম্পদ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় উন্নয়ন এবং আধুনিক কৃষি-ভিত্তিক অর্থনীতি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।