মাহমুদ শরীফ, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) : শহর কিংবা গ্রামেও এখন আর মাটির তৈরি তৈজসপত্র, হাঁড়ি-পাতিল তেমন চোখে পড়ে না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে এই মৃৎশিল্পটি। প্লাস্টিক, সিরামিক আর অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যসামগ্রী মৃৎশিল্পের বাজার দখল করেছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কল্যাণপুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির সদস্যরা মাটির আধুনিক মানের তৈজসপত্র তৈরি করছে প্রায় দেড় যুগ ধরে। তাদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও।

জেলার কুমারখালীর উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামে ৪০ জন সদস্য মিলে গড়ে তুলেছে কল্যাণপুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি। ৫০-৬০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করে প্রতিদিন। কেউ মাটি আর পানি দিয়ে কাদা তৈরি করছে, কেউ থালা, বাটি, ফুলদানি ও গ্লাস তৈরি করছে নিপুন হাতের কৌশলে। কেউ কেউ আবার শুকানোর পর সেগুলো যত্ন সহকারে পরিষ্কার করছে, রং দিয়ে কাারুকাজ করছে কেউ কেউ এদৃশ্য প্রতিদিনের।

সরেজমিনে কল্যাণপুর মৃৎশিল্পের পরিচালক বটোকৃষ্ণ পাল জানায়, আমার এই প্রতিষ্ঠানে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করে। বর্তমানে দেশের চেয়ে বর্হিবিশ্বে এই শিল্পের বেশ চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে অনেক চাহিদা তৈরি হয়েছে। ঢাকার ব্যবসায়ী এখান থেকে পণ্য নিয়ে কাতারে রপ্তানি করে। আরেক ব্যবসায়ী রপ্তানি করে সৌদি আরবে। অপর দুজন ব্যবসায়ী এখানকার পণ্য নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়।

সমিতির ম্যানেজার রাজকুমার বলেন, এই শিল্পের অতীত ঐতিহ্য খুবই সমৃদ্ধ। একসময় ঘরে ঘরে হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে গৃহস্থালির নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হতো মৃৎশিল্পের তৈজসপত্র। আমরা এখানে মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সে সব তৈজসপত্র তৈরি করছি।

সেখানে দীর্ঘদিন শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে চৈতালি দাস। সংসার চালাতে এই কাজ বেছে নিয়েছে সে। চৈতালি জানায়, এ কাজ করে মাসে সে তিন হাজার টাকা আয় করছে। আরেক শ্রমিক জানায়, এখানে কাজ করে মাস শেষে যে বেতন দেয় তার তিন ভাগের এক ভাগ যাতায়াতেই খরচ হয়ে যায়। টানাটানির মধ্যে সংসার চালাতে হয়।

এখান থেকে মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনতে আসা আব্দুল হক জানায়, মৃৎশিল্প বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে। এটা হাজার বছরের ঐতিহ্য এখন সেসব পণ্য নেই বললেই চলে, তাই কিছু পণ্য কিনতে এসেছি।