কামাল হোসেন আজাদ, কক্সবাজার: আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ৩৪টি বছর পেরিয়ে গেলেও বৈষম্য কাটিয়ে উঠতে পারেনি অরক্ষিত উপকূলবাসী। এখনও পর্যন্ত নির্মিত হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ। বড় কোন অজানা দুর্যোগের আশংকায় দিনাতিপাত সংশ্লিষ্ট উপকূলের মানুষগুলো। দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়ানো ভয়াবহ তা-বলীলায় দেশের উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, কুতুদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, সন্ধীপে ঘটে গিয়েছিল ইতিহাসের বড়ধরনের মানবিক বিপর্যয়। কেউ যেন কারো দিকে থাকাবার এমন পরিস্থিতিও হচ্ছিল না বেঁচে যাওয়াদের। নিজ নিজ স্বজনদের খোঁজ আর সন্ধান পেতে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল সেদিনকার পরিবেশে। ক’দিন যেতে না যেতেই বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল লাশের গন্ধ। এইদিনে স্বজন হারানোর কথা স্মরণ করতে চোখের পানিতে বুক ভাসান প্রিয়জনরা। ওইদিন বহু মানুষের গায়ে ঠিকমতো কাপড়ও ছিল না। ঠাঁইহীন উপকূলে অনেকে প্রাণে বেঁচেছিল গাছের সাথে বাঁদুর ঝোলা করে থাকা নারীদের চুল ধরে। লাশের খোঁজ মেলাতে গিয়ে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছিল সেখানকার পরিবেশ। সেদিনের গগণ বিদারি বুকফাটা আর্তনাদের এক একটা শোর চিৎকারে মনে হয়েছিল স্বজন হারানোদের শান্তনা দেবার ভাষা এক আল্লাহ ছাড়া বুঝি আর কারো কাছে নেই।
সূত্রমতে, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল এইদিন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক ভয়াবহতম দিন। ওইদিন ‘ম্যারি এন’ নামক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দেয় কক্সবাজারসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার পুরো উপকূল। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারদিকে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছিল। দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল প্রকৃতির করুণ এই আঘাত। স্বজন হারার আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠে চারিদিকের পরিবেশ। প্রাকৃতিক দূর্যোগের এতোবড় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি এদেশের মানুষ এর আগে আর কখনো হয়নি। পরদিন সারা বিশ্বের মানুষ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখেছিলেন ধ্বংসলীলা, আর্তনাদে কেঁপে উঠেছিল বিশ্ব বিবেক। বাংলাদেশে আঘাত হানা ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের সংখ্যা বিচারে পৃথিবীর ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে অন্যতম। ২৯শে এপ্রিল রাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা এ ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল/ঘন্টা)। ঘূর্ণিঝড় এবং তার প্রভাবে সৃষ্ট ৬মিটার (২০ফুট) উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা আরো বেশি। মারা যায় ২০ লাখ গবাদিপশু। গৃহহারা হয় হাজার হাজার পরিবার। ক্ষতি হয়েছিল ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ। সেইদিন প্রায় এক কোটি আশ্রয়হীন মানুষ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করেছিল।
এদিকে দিনটিকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় বিভিন্ন সংগঠন নানান কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে। এবারও বিভিন্ন ব্যানারে এসব সংগঠন একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তন্মধ্যে খতমে কুরআন, মিলাদ, দোয়া মাহফিল, শোক র্যালি, এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ ও স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা করবে উপকূলভিত্তিক সংশ্লিষ্ট সংগঠন।