বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, কোনো একটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও জনগণ তা রুখে দিবে। কোনো অবস্থাতেই জনগণ আওয়ামী লীগকে নৈরাজ্য সৃষ্টির সুযোগ দিবে না। আওয়ামী লীগ ১৫ বছরের দুর্নীতির টাকায় বিদেশে পালিয়ে থেকে দেশে কিছু সন্ত্রাসী দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রাজপথ দখলে নেয়ার স্বপ্ন দেখছে। জনগণ তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেবে না, তা প্রতিহত করবে। প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে জনগণ চুপ করে বসে থাকবে না। তখন কিন্তু আইনের দোহাই দেয়া চলবে না। জনগণ যদি আইন হাতে তুলে নেয় তবে আওয়ামী লীগের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নিষিদ্ধ ঘোষিত গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের ঢাকাসহ সারাদেশে ঝটিকা মিছিল, গুপ্ত হামলা, দেশব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল পূর্বক বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, যারা পিআর বুঝে না, তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা নাই। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে সকল গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে পিআর পদ্ধতিতে ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ড. মাসুদ বলেন, জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী বিপ্লবী নেতা আখতার হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করাসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হেনস্থা করার ঘটনায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন দায় এড়াতে পারবে না। সেখানকার বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত আওয়ামী দোসরদের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ঘটনার সাথে জড়িত প্রত্যেককে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। ঐ ঘটনার পর থেকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী সংগঠন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল, গুপ্ত হামলা, দেশব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি আওয়ামী লীগসহ তাদের শরিক ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ড. মাসুদ বলেন, জাতীয় পার্টি আর জাসদের (ইনু) মাধ্যমে ভোটের মাঠে ঢুকতে চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। এজন্য তারা সারাদেশে বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করার চক্রান্ত করছে। সরকার এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন না করলে দেশ ও জাতির জন্য কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা রুখে দিতে ড. মাসুদ আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচার নিশ্চিত না হলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ব ঘোষণা করলেও আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর শুধু আওয়ামী লীগ এককভাবে দেশের জনগণের ওপর জুলুম করেনি। ১৪ দলীয় জোট সমন্বিতভাবে জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন করেছে। প্রতিটি গণহত্যার জন্য ১৪ দলীয় জোটের নেতারা সমানভাবে অপরাধী।
ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, যারা ঈদের পরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে আর রাজপথে আসেনি, তারাই এখন আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চায়, আওয়ামী লীগকে ভোটের মাঠে চায়। কারণ এরাই আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের সঙ্গী ছিল। আওয়ামী লীগের দুর্নীতি-লুটপাটের সুবিধা এরাও ভোগ করেছে। যার কারণে আওয়ামী লীগের গণহত্যা বিরুদ্ধে ঐ দলের নেতারা কথা বলছে না, বিচার চাচ্ছে না। বরং বিচার বিলম্বিত করতে যা যা করার তারা সবই করছে। তিনি আরো বলেন, একটি দল সংবিধানের দোহাই দিয়ে ছাত্র-জনতার প্রতিটি দাবির বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে আজকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমেদ খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমীর মাওলানা শরীফুল ইসলাম, ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, পল্টন থানা সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়াও সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহবাগ পূর্ব থানা আমীর আহাসন হাবীব, শাহবাগ পশ্চিম থানা আমীর এডভোকেট শাহ মাহফুজুল হক, মতিঝিল দক্ষিণ থানা আমীর মাওলানা মোতাসিম বিল্লাহসহ ঢাকা-৮ আসনের সাংগঠনিক সকল থানা দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে, বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে মতিঝিল-নয়াপল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।