শীত আসতে না-আসতেই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ততা বেড়েছে ঐতিহ্যবাহী লেপ-তোশক কারখানাগুলোতে। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া, চুকনগর, শাহাপুর, শ্যামপুরসহ বিভিন্ন গ্রামও এই শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। তবে কাঁচামালের অস্থির বাজার, যন্ত্রনির্ভর পণ্যের প্রতিযোগিতা এবং অভাবনীয় অফ সিজন-সব মিলিয়ে ক্ষুদ্র কারিগরদের অবস্থা নাজুক হয়ে উঠছে। বছরের পাঁচ মাস- কার্তিক থেকে ফাল্গুন-এই অঞ্চলের লেপ ও তোশক কারিগরদের প্রধান কাজের মওসুম। শীত মওসুমে তাদের কর্মব্যস্ততা থাকলেও অফ সিজনে বেকারত্ব ও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে হয় বেশির ভাগ কারিগরকে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও টিকে থাকার সংগ্রাম যেন তাদের নিত্যসঙ্গী।
খুলনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লেপ-তোশকের কাজের সুনাম যেমন আছে, তেমনি আছে কষ্ট, পরিশ্রম ও আর্থিক অস্থিরতা।
কারিগররা জানিয়েছেন, তুলা এবং পলি ফোম-এই দুটি কাঁচামালের দামের ওঠানামায় তাদের শ্রমের মূল আয়কে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। প্রতিটি লেপ তৈরিতে লাগে ৬ থেকে ৭ কেজি তুলা। তুলার দাম কেজিপ্রতি কখনো ৫০ টাকা, কখনো ৬০ বা ৭০ টাকাও হয়ে থাকে। আর পলি ফোমের পাইকারি দাম কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। তোশক তৈরির ক্ষেত্রে খরচ আরো বেশি। একটি তোশকে তুলা লাগে ১৫ থেকে ২০ কেজি, যার দাম এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। মিলন বলেন, দাম বাড়লে আমাদের লাভের পরিমাণ কমে যায়। আবার কম দামে বিক্রি করলে খরচই ওঠে না। তাই প্রতিনিয়ত সবকিছু হিসাব নিকাশ কষে চলতে হয়। তাদের তৈরি ছোট লেপ বাজারে বিক্রি হয় এক হাজার ২০০ টাকা, আর বড় লেপ এক হাজার ৭০০ টাকা। প্রতিটি পিস তৈরির জন্য মালিকপক্ষ থেকে তারা পান ২৫০ টাকা করে।
তিনি আরো জানান, মওসুমে একজনের আয় মাসে গড়ে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। কিন্তু মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ অফ সিজনে আয় নেমে আসে মাত্র ১০ হাজার টাকায়। এই আয়ে পরিবার চালানো, কাঁচামাল কেনা এবং দৈনন্দিন ব্যয় মেটানো অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে।