শফিকুল ইসলাম, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রাম-বাংলার এক সময়ের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম বা বাহন ছিল ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ির পাশা-পাশি জনপ্রিয় মহিষের গাড়িও। যা আজ বিলুপ্তির পথে। নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটেছে। পক্ষান্তরে হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের ওই সব চিরচেনা ঐতিহ্য।

জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের একজন বৃদ্ধ ইতিহাসের শিক্ষক আব্দুল্লাহ হিল কফি জানান, মহিষের গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিষ্টজন্মের ১৫ থেকে ১৬শত বছর আগে সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ি ও মহিষের গাড়িতে চলাচল প্রচলন ছিল। যা সেখান থেকে ক্রমে-ক্রমে তৎকালীন রাজশাহী জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমার গ্রাম-বাংলায় অতি জনপ্রিয় যানবাহন হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।

জেলা সদরসহ ৫টি উপজেলা ও চারটি পৌরসভার গ্রাম-বাংলার এ ঐতিহ্যবাহী যানবাহন মহিষের গাড়ি আজ বিলুপ্তির হতে চলেছে। বিশেষ করে এ জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ পরিবহনের জনপ্রিয় বাহন ছিল ওই গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এসব বাহন। যা অদূর ভবিষ্যতে এই যানবাহনটি হবে শুধুই স্মৃতি!

মাঝে মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি মহিষের গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। সে কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরা তো দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের ছেলে-মেয়েরাও এ বাহনের গাড়ি শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়।

প্রায় ৩ দশক আগেও মহিষের গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। মহিষ ও গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ের কল্পনাও করা যেত না। বিয়ে বাড়ি বা মালামাল পরিবহনে এসব বাহন ছিল একমাত্র অবলম্বন। গরু বা মহিষের গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। সেই চালককে উদ্দেশ্য করে বিখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী মরহুম আব্বাস উদ্দিন গরুর ও মহিষের গাড়ির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে তিনি গেছেন, ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাকাও গাড়ি...!

এছাড়াও রচিত হয়েছে গান' 'আন্তে বোলাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিয়া ন্যাং মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল' এ রকম যুগান্তকারী সেইসব রোমান্টিক ভাওয়াইয়া গান শোনা যেত। পরিশেষে বলতে হয়, জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলে এখনো কিছু ঐতিহ্যবাহী গৃহস্থ পরিবারে মহিষের গাড়ি ব্যবহারের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়।