গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নারায়ণগঞ্জ নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্পের অর্ধশতাধিক এলাকার প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিতভাবে সেচ প্রকল্প নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনের খালগুলো দখল ও বর্জ্য দূষণে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ এখন চরম আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেচ প্রকল্পের ভিতর পানি নিষ্কাশন খাল গুলো বিভিন্ন জায়গায় মাইলের পর মাইল দখল হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ড্রেনের মুখ খুলে দিলেও সংস্কার না হওয়া ক্যানেল গুলো বন্ধ থাকায় পানি যেতে পারে না। ক্রটিপূর্ণ ক্যানেল দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। অগ্রনী সেচ প্রকল্পের ভেতরের বিভিন্ন এলাকায় এখন থৈ-থৈ পানি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার অধিকাংশ জায়গার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তারাব, বরপা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল,মধ্যপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, বৌবাজার, খালপাড়, ইসলামবাগ, নতুন বাজার, কান্দাপাড়া, বলাইখা, বিজয়নগর, মদিনানগর, তেঁতলাব, কর্ণগোপ, শান্তিনগর, বাগানবাড়ি, পশ্চিম কান্দাপাড়া, মাসাব, যাত্রামুড়া, রূপসী মাঝিপাড়া, সোনাব, পাচাইখা, ইসলামপুর,কাঞ্চন ও হাটাবসহ আশপাশের এলাকায় এখন জলাবদ্ধতা। এতে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়ির উঠোনেই পানি হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ। অনেকের বসত ঘরে ২-৩ ফুট পানি। রাস্তা ঘাট তলিয়ে গেছে।
জমির ফসলের গাছ হলদে হয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। গবাদি পশু অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। বাড়িতে পানি উঠায় কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বাঁশের মাচার ওপর বসবাস করছেন।
কয়েকটি শিল্প কারখানায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি স্থানে নৌকায় ও বাশের সাকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সেসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। এছাড়া শিল্প কারখানার নির্গত ক্যামিকেল ও দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানিতে দূষণ হয়ে রোগাক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। নারী ও শিশুরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
গোলাকান্দাইল এলাকার মুজিবুর রহমান বলেন,শিল্পকারখানার নির্গত বর্জ্যসহ বিভিন্ন বর্জে খাল গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যুগ যুগ ধরেই এ সময়টাতে এখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেচ প্রকল্পের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে জলাবদ্ধতার সাথে লড়াই করে বাঁচতে হচ্ছে।
কর্ণগোপ গ্রামের গৃহীনি শামীমা বেগম বলেন, এখানকার নিচু এলাকা সব ডুবে গেছে।ঘরে হাঁটু সমান পানি। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। চুলায় আগুন জ্বালাতে পারি না। বিশুদ্ধ পানি নেই। অনেকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে এ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
মাসাব এলাকার সার্ভেয়ার জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই এ একই সমস্যা চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে দুর্ভোগকে মেনে নিচ্ছে। কিছু শিল্প মালিক ও প্রভাবশালীরা নিজ স্বার্থে খালগুলো ভরাটের কারণে অগ্রণী সেচ প্রকল্পের খালগুলো ক্রটিপূর্ণ হয়ে পড়েছে । অল্প বৃষ্টিতেই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধা গ্রস্থ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
তেতলাব এলাকার সুমন রানা বলেন, বৃষ্টি শুরু হলেই দুশ্চিন্তা শুরু হয়। কোমর পানি পার হয়ে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে হয়। প্রায় প্রতি বর্ষায় পানির নিচে ডুবে থাকি। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা-ঘাট, ঘরের উঠানসহ সব পানিতে তলিয়ে যায়।
এ পানি রোগের উৎস হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে চর্মরোগ, এলার্জি, ঘা, চুলকানি দেখা দিচ্ছে মানুষের।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খনন ও ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা ৮টি খাল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।পানি নিষ্কাশন কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য তারাব অংশে তিনটি সেচ পাম্প বসানো হয়েছে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই উপজেলার এই জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে।