ঝিনাইদহ সংবাদদাতা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশকে ঘিরে ঝিনাইদহ জেলায় সৃষ্টি হয়েছিল ঈমানি উদ্দীপনার এক জোয়ার। সদর, হরিণাকুন্ডু, শৈলকূপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরের প্রতিটি উপজেলার হাজারো কর্মী-সমর্থক রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বহু আগেই। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গাড়ির সংকট, নিরাপত্তা সংশয়, স্থানীয় বাধা, এবং ব্যক্তিগত কিছু প্রতিকূলতা,তাদের স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দেয়।

তারা বলেন,আমরা শরীর নিয়ে যেতে পারিনি, কিন্তু হৃদয় নিয়ে ছিলাম সমাবেশের প্রতিটি মুহূর্তে। চোখ ছিল লাইভ স্ক্রিনে, মন ছিল ঢাকার মঞ্চে।

ঝিনাইদহ সদরের আনিছ, হানিফ, রুহুল আমিন, আজিজুর রহমান, কদর আলী বলেন,শুক্রবার এশার নামাজের পর রওনার পরিকল্পনা ছিল। সবাই রেডি ছিলাম। কিন্তু গাড়ি পাওয়া গেল না। রাস্তায় বাধার আশঙ্কা, চালকদের অনীহা,সব মিলিয়ে আমরা গুটিয়ে গেলাম। শনিবার ফজরের পরও চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের স্বপ্ন ছিল ঢাকায় গিয়ে ইসলামী চেতনার পতাকা উঁচু করা, সেই স্বপ্ন রয়ে গেল অতৃপ্ত।

এদিকে হরিণাকুন্ডুর সাহেদ, বাবুল, ইসলাম, জাহিদুর, মান্না, আব্দুর রহমান বলেন,আমরা সংকল্প করেছিলাম, যেকোনো মূল্যে ঢাকা যাবো। কিন্তু আমাদের যাওয়া হলো না।

আমরা শুধু চোখের জল ফেলে বসে ছিলাম। এটা শুধু একটি সমাবেশ ছিল না, এটা ছিল ইসলামী জাগরণের অংশ আমরা সেই ইতিহাস থেকে ছিটকে পড়লাম।

শৈলকূপার কাইয়ুম, হাফিজ, আলমগীর, সাইফুল, রানা হামিদ জানান,আমরা খাবার, ব্যানার, সব রেডি করে রেখেছিলাম। হাজার হাজার ভাই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু যাওয়ার কোন গাড়ি না পাওয়ায় শেষপর্যন্ত সবাই বাড়িতে ফিরে গেল চুপচাপ। এই হতাশা আমাদের জন্য হৃদয়ে গেঁথে থাকা ক্ষত হয়ে থাকবে।

কালীগঞ্জের মিজানুর, হযরত আলী, জয়নুল, শহিদুল, বিপ্লব বলেন,অনেকে পরিবার ও কাজের কারণে যেতে পারেননি, অনেকে গাড়ি রিজার্ভ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। আমাদের প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু পথ বন্ধ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত টিভি আর মোবাইলের পর্দায় চোখ রেখেই কাটাতে হয়েছে ঐতিহাসিক এই দিনটি।

কোটচাঁদপুরের বিল্লাল, মাসুম, শফিকুল, ইসমাইল বলেন,সমাবেশে যাওয়ার জন্য আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।

কেউ কেউ নিজের বাইক নিয়ে রওনা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু নিরাপত্তা ও রাস্তায় বাধার আশঙ্কায় পিছিয়ে আসে। এটা আমাদের জন্য চরম হতাশার।

মহেশপুরের সজল, হাবিবুর, নবাই ম-ল, শাহিন বলেন,

আমরা গাড়ি ভাড়া করেছিলাম, টাকা জোগাড় করেছিলাম। কিন্তু সীমান্ত এলাকা হওয়ায় যাত্রার আগেই একাধিক বাধা এসে পড়ে। ভাইয়েরা চোখের পানি ফেলেছেন,এটা মুখে বলার মতো নয়। আল্লাহ যদি চান, সামনে যেন এমন মজলুম দিন আর দেখতে না হয়।

এই ঐতিহাসিক সমাবেশে শারীরিকভাবে অংশ নিতে না পারলেও ঝিনাইদহ জেলার জামায়াত কর্মীরা ছিলেন মানসিক ও হৃদয় দিয়ে সম্পৃক্ত। তারা বলেন,

আমরা স্ব-শরীরে না থাকলেও, আমাদের চোখ ছিল পর্দায়, কান ছিল মঞ্চের দিকে। যে ভালোবাসা আর অনুভূতি ছিল তা কোনো কিছু থামাতে পারেনি।

তারা আরও বলেন, ভবিষ্যতে যেন এমন প্রস্তুতিহীনতা ও যানবাহনের সংকটে আর কেউ বঞ্চিত না হয়, সে জন্য আগেভাগেই দলীয়ভাবে সুসংগঠিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।