পাবনা সংবাদদাতা : পাবনায় পদ্মা নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। বিপাকে পড়েছে নদী পাড়ের হাজার হাজার কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পদ্মা পারের বসতি বাড়ি-ঘরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়তই অভিযান চলছে তবুও থামছে না বালুদস্যুদের বালি উত্তোলনের দৌরাত্ম্য।
পাবনা সদর উপজেলা চরতারাপুর, ঈশ্বরদীর সাঁড়াঘাট আরামবাড়িয়া ও সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া, তারাবাড়িয়া, হঠাৎ পারা, ফকিরপুর পদ্মা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে চরের শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষি জমির পরিমাণ আশংকাজনক হারে কমে যাওয়ায় কৃষকরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। দিন রাত ভ্রাম্যমাণ ড্রেজার দিয়ে দেদারসে বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতির সম্মুখে পড়েছে ঈশ্বরদী সাঁড়া ইউনিয়নের নদীরক্ষা বাঁধ এবং পাকশী লালনশাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবনা জেলার বেশ কিছু পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে প্রায় শতাধিক ট্রলারের মাধ্যমে বিভিন্ন যায়গায় বালু বহন করে নিয়ে যায় কিছু প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায়। প্রভাবশালী বালি ব্যবসায়ীরা পুলিশকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও বিক্রি করে আসছেন। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে সরকার যেমন কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি নদী গর্ভে জমি বিলুপ্তির কারণে কৃষকেরাও পরেছে চরম বিপাকে।
ঈশ্বরদী ও সুজানগরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিগত বছরগুলোতে পদ্মার ভাঙ্গনে আমাদের বেশ কিছু জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। আর গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বালি উত্তোলন বন্ধ না হলে বাকী জমিও নদীর গর্ভে মিশে যাবে। শিক্ষার্থী ও পাকশীতে বেড়াতে আসা দর্শনার্থী জানান এসব বালি উত্তোলন বন্ধ না হলে হাডিঞ্জ ব্রিজ ঝুঁকিতে পতিত হবে।
পাবনার পুলিশ সুপার মোঃ মোরতোজা আলী খাঁন বালি উত্তোলনে পুলিশের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। তবে তিনি মৌখিকভাবে সাংবাদিকদের বলেন, এটা নৌ পুলিশের কাজ। তাছাড়া যখন জেলা প্রশাসন অভিযানের জন্য পুলিশ চান আমরা তখন দিয়ে থাকি। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, অনেক সাংবাদিক বালি উত্তোলনের ভাগ পায় না এজন্য নিউজ করতে আমার বক্তব্য নিতে আসে।
পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম এ বিষয়ে জানান, আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান করছি তবুও থামছে না বালি উত্তোলনকারীদের দৌরাত্ম্য। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কারণে ফসলী জমির ক্ষতি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
কৃষকের আবাদি জমি, পরিবেশের ভারসাম্যতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নদী ভাঙ্গন রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে বন্ধ হবে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন এমনটায় প্রত্যাশা এখানকার ভুক্তভগী কৃষক ও স্থানীয়দের।