কানাডা সফর শেষে নগরীর সার্বিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল রোববার দুপুরে বাটালি হিলস্থ প্রধান নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। কানাডা সফর প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, কানাডা সফর আমাকে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা দিয়েছে। টরন্টো ও মন্ট্রিয়লে বিভিন্ন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চট্টগ্রামের উন্নয়ন কার্যক্রম, আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, পরিবেশবান্ধব নগর গড়ে তোলার পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি জানান, কানাডার কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির মধ্যে যৌথ সহযোগিতার জন্য একটি চুক্তি হয়েছে। এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও শিক্ষার্থী বিনিময়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

এছাড়া, টরেন্টোর বাংলা টাউনের ড্যানফোর্থ এলাকায় অন্টারিও প্রদেশের এমপিপি মেরি-মার্গারেট ম্যাকমাহনের সঙ্গে বৈঠকে জলবায়ু সহনশীলতা, স্টার্টআপ উন্নয়ন এবং নার্সিং খাতে দক্ষ জনশক্তি গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। টরন্টো সিটি হলে মেয়র অলিভিয়া চৌ ও এমপিপি ডলি বেগমের সঙ্গে যৌথ বৈঠকে নগর উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও স্বাস্থ্যখাতে প্রশিক্ষিত জনবল বিনিময়ের সম্ভাবনা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়। মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের জন্য আন্তর্জাতিক সিটি-টু-সিটি সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টরন্টো সিটির সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তি (সিস্টার সিটি) স্বাক্ষরের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এটি বাস্তবায়িত হলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

কানাডা সফরের সময় মেয়র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপিপি ডলি বেগম, সালমা জাহিদসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। লেদার পণ্য রপ্তানি, নার্সিং ও হেলথকেয়ার সেবা, গ্রীন এনার্জি এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কানাডার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একাধিক বৈঠক করেন চসিক মেয়র। পুলিশ প্রশাসন সংস্কার প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, কানাডার পুলিশ জনবান্ধব। তারা ভদ্রভাবে জনগণের সাথে কথোপকথন করে তারপর আইন প্রয়োগ করে। এই মডেল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের পুলিশ ব্যবস্থাও সংস্কারের প্রয়োজন। মেয়র বলেন, শহরের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জনসচেতনতা বাড়াতে আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় আমরা ১০০ দিনের বিশেষ মশক নিধনের লক্ষ্যে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করেছি, যা আগামী তিন মাস চলবে।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। বাসাবাড়িতে পানি জমে থাকা যেকোনো জায়গা, যেমন ডাবের খোসা, প্লাস্টিক বোতল, টব, টায়ার কিংবা বালতি, মশার লার্ভার জন্মের বড় উৎস। মাত্র ১-২ মিলিলিটার পানিতেও ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এডিস মশার লার্ভা জন্মাতে পারে। তাই বাসাবাড়ির বালতিগুলো উল্টো করে রাখা, টবের পানি নিয়মিত পরিবর্তন এবং এসির পানি জমে থাকা বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।

মেয়র আরও উল্লেখ করেন, চিকুনগুনিয়ার প্রভাব এই বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর তুলনায় বেশি। এজন্য আমরা প্রতিটি হটস্পট এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছি। প্রয়োজনে আমি নিজে প্রতিটি জোনে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব। তিনি সকল নাগরিককে আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি কোথাও মশার প্রাদুর্ভাব বা সমস্যার অভিযোগ থাকে, সিটি কর্পোরেশনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সরাসরি জানাতে পারবেন। আমি নিজেও সব সময় নাগরিক সেবার জন্য প্রস্তুত আছি। নালায় পড়ে শিশু মৃত্যুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হালিশহরের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিবন্ধী, শিশু এবং বয়স্কদের জন্য বিশেষ সতর্কতা ও সচেতনতার প্রয়োজন। আমরা পরিবার ও কেয়ারটেকারদের দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি এবং সিটি কর্পোরেশন থেকেও সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে।