ফেনী সংবাদদাতা : দেশের শীর্ষ রেমিটেন্স সমৃদ্ধ জেলা ফেনী আয়তনে দেশের খুবই ছোট একটি জেলা। কিন্তু ফি বছর একদিকে ভারতের উজানের পানিতে তলিয়ে যায় জেলার উত্তর জনপদের পাঁচ উপজেলা, বাকি এক উপজেলা জ্বলোচ্ছ্বাসের শিকার হয়ে নাকাল হয়।
হঠাৎ করে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত বৃষ্টি বাদল ছাড়া ভারতের পানিতে প্লাবন সৃষ্টি করেছে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায়। একমাস আগে হয়ে যাওয়া বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাঁধের ২৫/২৬টা স্থান দিয়ে অবাধে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে, ঠিক সেই সময় গত শনিবার সোনাগাজী উপজেলায় সৃষ্টি হয়েছে জ্বলোচ্ছ্বাস।
এই উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল।এখানে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ সোলার বিদ্যুৎ প্রজেক্ট, আছে ধান গবেষণাগার, রয়েছে দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র,আরো আছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুহুরী সেচ প্রকল্প। এর সবগুলোই সাগরের তীরে।
ফেনীর একমাত্র উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে অন্তত ১১টি গ্রাম। এতে বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, মাছের ঘের ও সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ফেনী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি হয়ে নদীতীরবর্তী সায়েদপুর, চর ইঞ্জিমান, মাদরাসা পাড়া, আমতলী, ইতালি মার্কেট, রহমতপুর, তেল্লার ঘাট, কাজীর হাটসহ আশপাশের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শনিবারের জোয়ার ছিল অস্বাভাবিক। এমন উচ্চতার পানি আগে কখনো দেখেনি এ জনপদের বর্তমান প্রজন্ম।
মূলত মুছাপুর রেগুলেটর না থাকায় প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ছে। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, মাছের ঘের সবকিছুই বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করছে এলাকাবাসী। জোয়ারের পানি সরাসরি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এলাকার জনগন বহুবার স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। সোনাগাজী,ফেনী এমনকি ঢাকাতেও এব্যাপারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে কিন্তু সরকারের টনক নড়েনি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৬৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে রোববারও জেলাজুড়ে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা প্লাবিত অঞ্চল ও স্লুইসগেট পর্যবেক্ষণ করেছি। শনিবার পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫.১৪৬ মিটার। অমাবস্যার কারণে এমনিতেই পানির উচ্চতা বেড়ে যায়, তার ওপর রেগুলেটর না থাকায় সাগরের পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
মুসাপুর রেগুলেটরের কাজ না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হবে নদী তীরবর্তী মানুষদের।