গ্রাম-গঞ্জ-শহর
কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা
ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপ লাইনের রুট পরিবর্তন হওয়ায় ফুঁসে উঠছে খুলনাবাসী
ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপ লাইনের রুট পরিবর্তন হওয়ায় ফুসে উঠছে খুলনাবাসী। ঈদের পর কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এ হটকারী সিদ্ধান্ত পরিবর্তে কঠোর বার্তা দিয়েছেন ।
Printed Edition
ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপ লাইনের রুট পরিবর্তন হওয়ায় ফুসে উঠছে খুলনাবাসী। ঈদের পর কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এ হটকারী সিদ্ধান্ত পরিবর্তে কঠোর বার্তা দিয়েছেন । খুলনা নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দও এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে খুলনা অচলের ডাক দিয়েছেন। এছাড়া খুলনার রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একাট্টা হচ্ছে। পেট্টোবাংলা ভোলা-বরিশাল অংশ অপরিবর্তিত রেখে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান জানিয়েছেন বরিশাল-খুলনা পাইপলাইনও হবে, তবে প্রথম ধাপে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে, বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বুধবার (৫ মার্চ) ফাইল স্বাক্ষর করেছেন। আর এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। কড়া বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত।
খুলনা উন্নয়নের নেতৃবৃন্দ বলেন, খুলনায় শিল্প কলকারখানা গ্যাসের অভাবে চালু ও নতুন শিল্প গড়ে উঠছে না। সে দিকে লক্ষ্য না রেখে পেট্রোবাংলার এই সিদ্ধান্ত খুলনার প্রতি বিমাতা সুলভ আচারণের বহিঃপ্রকাশ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলে শিল্প-কলকারখানা স্থাপন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল সেটাকে অব্যাহত রাখতে পেট্রোবাংলার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জোর দাবি জানাচ্ছি। শুধু খুলনা নয় মোংলা ইপিজেডেও গ্যাসের প্রয়োজন। সরকারের সিদ্ধান্ত হীনতার কারণে খুলনায় জনসংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে যা অন্য শহরে বাড়ছে। ইতোমধ্যে খুলনা নভো থিয়েটার, বিমান বন্দর প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে যাহা প্রমাণ করে খুলনার প্রতি সরকারের বিমাতা সুলভ আচরণ। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা না হলে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান ও মহাসচিব এডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এদিকে এমন সংবাদে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ পেট্রোবাংলার সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ করার লক্ষ্যে ২০১২ সালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়। স্থাপন করা হয় গ্যাস ট্রান্সমিশন ল্যান্ড ফিল্ডও। এরপর এক যুগ কেটে গেলেও খুলনার কোথাও সরবরাহ করা হয়নি গ্যাস। বছরের পর বছর এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসলেও তা থেকেছে উপেক্ষিত। অতি সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা আবারও তাদের দাবি জোরদার করলে নতুন করে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয় সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। প্রথম পর্যায়ে খুলনা বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় সরবরাহ করার কথা এ গ্যাস। কিন্তু এরই মধ্যে ভোলা-বরিশাল অংশ অপরিবর্তিত রেখে পেট্রোবাংলা ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপ লাইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা আত্মঘাতি ও খুলনা অঞ্চলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুকৌশলে ধ্বংসের নীল নকশা মাত্র। অবিলম্বে গৃহিত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে প্রথম ধাপে খুলনায় গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, চলতি বছরের জুন মাসে খুলনায় গ্যাস সরবরাহের খবরে উচ্ছ্বসিত ছিলো এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি বিসিক শিল্প এলাকায় বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ার আশা ছিলো তাদের। যেসব প্রতিষ্ঠান গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেছে, ইতোমধ্যেই সে সকল প্রতিষ্ঠান এনওসিও সংগ্রহ করেছে। খুলনা শিল্পাঞ্চলের অনেক প্রতিষ্ঠান লোকসানের কারণে বন্ধ হয়েছে। গ্যাস সংযোগ দেয়া হলে বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও চালু হবে। সেই সঙ্গে ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানগুলোও লাভের মুখ দেখবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান হবে। সব মিলিয়ে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে সম্ভাবনা বাড়বে। নেতৃবৃন্দ প্রথম ধাপে খুলনায় গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় খুলনাবাসিকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুশিয়ারি দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর সভাপতি এডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা, জেলা আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন ও জেলা সদস্য সচিব আবু হোসেন বাবু।
অপরদিকে ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপ লাইনের রুট, ভোলা-বরিশাল অংশ অপরিবর্তিত রেখে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপ লাইন করার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ। সাথে সাথে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপ লাইনের রুট রাখার দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত কয়েক দশক ধরেই খুলনাবাসীর মধ্যে পাইপলাইনের গ্যাস নিয়ে আলোচনা চলে আসছিল। গ্যাসের অভাবে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প কলকারখানা চালু ও নতুন শিল্প গড়ে উঠছে না। সে দিকে লক্ষ্য না করে পেট্রোবাংলা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা খুলনা তথা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রতি বিমাতা সুলভ আচারণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলে শিল্প-কলকারখানা স্থাপন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা যেটুকু দেখা দিয়েছিল সেটা ধরে রাখতে পেট্রোবাংলার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, পাইপ লাইনের গ্যাসের জন্য শুধু খুলনা নয় মোংলা ইপিজেডও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত হীনতার কারণে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য স্তবির হয়ে পড়বে। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্তের সাথে বিভাগীয় শহর খুলনাকে গুরুত্ব দিয়ে ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপলাইনের রুট নির্ধারণ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করেছে, এমনকি বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ৫ মার্চ ফাইলে স্বাক্ষরও হয়েছে কিন্তু এই সিদ্ধান্ত যে পরিবর্তন করা যাবে না এমন কোন কারণ তো নেই। নেতৃবৃন্দ বিবিৃতিতে অবিলম্বে আবারো ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপ লাইনের রুট সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র গঠনে ছাত্র-জনতার যে গণঅভ্যুত্থানের সরকার সে সরকারকে একটি অঞ্চলের প্রতি বৈষম্য করে জনদাবির প্রতি অবজ্ঞা করে কোন দিন বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। তাই অবিলম্বে এই সিদ্ধান্তের সাথে খুলনাকে যুক্ত না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে খুলনা তথা এ অঞ্চলকে অচল করে দিয়ে দাবি আদায় করা হবে বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, টিম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান খান ও মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ও সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন ও সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান।