এক সময় দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচ্ছন্ন নগরীর স্বীকৃতি অর্জন করেছিল রাজশাহী মহানগরী। সেই রাজশাহীতে এখন দখল, দূষণ আর যানজটে নাকাল নগরবাসী। তাদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারছে না সিটি করপোরেশন (রাসিক)। নগরীকে দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে রাসিক।

সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর ছোট-বড় রাস্তা, গলিপথ ও হাঁটাপথ এখন বেদখল। নালা-নর্দমা ও ড্রেন উপচে ময়লা পানি সড়ক ও বাসায় ঢুকছে। এতে পথচারী ও মহল্লাবাসী ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ। সরকারি কর্মকর্তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকলেও তারা মাসে একবারও কাউন্সিলর অফিসে যান না এবং নগরবাসীর সমস্যার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখেন না। নগরীর ভদ্রা মোড় থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ফুটপাত ভাঙারি ব্যবসায়ী ও দোকানদারের দ্বারা দখল। ভদ্রা মোড়ের টাইলস লাগানো ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে ফলের দোকান। পূর্বাংশের পুরো ফুটপাত দখল করে বানানো হয়েছে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসের কাউন্টার। সিরোইল, রেশম ভবন ও ঢাকা বাস কাউন্টারের দেয়াল ঘেঁষে শতাধিক দোকান ফুটপাত দখল করেছে। অন্যদিকে, নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজারের এক ইঞ্চি ফুটপাতও দখলের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। জিরো পয়েন্ট থেকে সোনাদিঘির মোড় ছাড়াও মালোপাড়া থেকে সোনাদিঘি পর্যন্ত ফুটপাতের ওপর বসছে শত শত দোকান। সাহেববাজারের সড়কের অর্ধেকের বেশি জায়গায় অবৈধ দোকানে গিজগিজ করছে। এ এলাকায় ফুটপাত দিয়ে পথচারীর দুই কদমও হেঁটে চলার উপায় নেই। নগরীজুড়ে এভাবে ফুটপাতের গণদখল পরিস্থিতিতে পদে পদে বিড়ম্বনায় পড়ছেন নগরবাসী। এছাড়াও মালোপাড়া মোড় থেকে দড়িখরবনা মোড় এবং গণকপাড়া মোড় থেকে রেলগেট মোড় পর্যন্ত চলাচলেও নগরীরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। এ দুইটির রাস্তার দুই পাশ দখল হয়ে আছে। ফলে প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্থ হচ্ছে চলাচল।

অপরদিকে, নগরীজুড়ে ময়লা-আবর্জ্যার স্তূপ দীর্ঘদিন ধরে জমে রয়েছে। বহরমপুর, হড়গ্রাম, বুলনপুর, বড়কুঠি, শালবাগান, সাগরপাড়া, লক্ষ্মীপুর, উপশহর, সপুরা, তেরখাদিয়া প্রভৃতি এলাকায় মোড়ে ময়লা-আবর্জনাা দৃশ্যমান। সেগুলো যেন দেখার কেউ নেই। এ সব ময়লা-আবর্জনার স্তূপের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীজুড়ে যানজট বিরাজ করছে। রেলগেট-বহরমপুর গ্রেটার রোড, ঘোষপাড়া থেকে ঝাউতলা পর্যন্ত গাড়ি ঘণ্টাব্যাপী আটকে থাকে। বিশেষ করে মেডিকেল হাসপাতালের সামনের সড়ক ভ্রাম্যমাণ দোকান ও অটোরিকশার কারণে যানজটবদ্ধ। এতে মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে সহজে প্রবেশ করতে পারছে না। এছাড়াও ঘোষপাড়া মোড় থেকে লক্ষ্মীপুর মোড় হয়ে ঝাউতলা পর্যন্ত ঘণ্টব্যাপী যানজটে আটকা থাকছে পথচলতি মানুষ। নগরীতে অটোরিকশার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি এবং অনুমোদনবিহীনভাবে চলাচল করছে। ফুটপাত দখল ও অতিরিক্ত অটোরিকশার কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে। রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন জানান, ময়লা ও বর্জ্য অপসারণ নিয়মিত হচ্ছে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং যানজট বিষয়টি নগর পুলিশের দায়িত্ব।