কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ হাসপাতালে পোস্টিং নিতে আগ্রহী নন। মেডিকেল কলেজে পোস্টিং নিলে অল্প সময়ে ক্লাসের পর ব্যাপক সময় প্রাইভেট চেম্বারে সময় দেওয়া যায়। ফলে চিকিৎসক সংকট আরও তীব্রতর হচ্ছে। এছাড়াও ফ্যাসিস্ট আমলে হাসপাতালের মূল্যবান যন্ত্রপাতি চুরি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সৃজনকৃত বিভিন্ন গ্রেডের চিকিৎসক পদের সংখ্যা ১২৩টি। তন্মধ্যে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ৮৫ জন। বাকি ৩৮টি পদই শূন্য। হাসপাতালে পরিচালকের পদে লোক নেই। চিফ কনসালটেন্টের ১০টি পদের মধ্যে সব কয়টিই খালি। সিনিয়র কনসালটেটেন্টর ১২টি পদের মধ্যে ৯টি পদই শূন্য। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ হাসপাতালে পোস্টিং না নিয়ে মেডিকেল কলেজে পোস্টিং নিয়ে প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

তাছাড়া রেজিস্ট্রার/সহকারী রেজিস্ট্রার/ সহকারী সার্জনের পদে ৪৬ জন কর্মরত আছেন, বাকি ৯টি পদ শূন্য। তাছাড়াও জুনিয়র কনসালটেন্ট(ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (নিউরো মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথিওলজিস্ট), জুনিয়ার কনসালটেন্ট (ডেন্টাল), আবাসিক চিকিৎসক, ক্লিনিক্যাল প্যাথোলজিস্ট, ডেন্টাল সার্জন, রেজিস্ট্রার (শিশু) ও সহকারী রেজিস্ট্রারের (আয়ুর্বেদিক) পদ খালি রয়েছে।

এদিকে নার্সিং কর্মকর্তাদের মধ্যে সেবা তত্তাবধায়ক, উপ-সেবা তত্তাবধায়ক ও একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদ খালি। তাছাড়া মিডওয়াইফের ৪টি পদ শূন্য রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের মধ্যে বায়োকেমিস্ট, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও স্টোর অফিসারের পদ খালি।

তৃতীয়-চতুর্থ ও আউটসোর্সিং কর্মচারীদের ৬৪ টি পদ শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের স্টোর কিপার, সহকারী হিসাবরক্ষক, ক্যাশিয়ার, ফার্মাসিস্ট, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (এসআইটি), মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান (ইসিজি), মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান (ইটিটি), স্টেনোগ্রাফার, ডায়টেশিয়ান, প্রধান সহকারী, স্টুয়ার্ড, ইনস্ট্রুমেন্ট কেয়ার টেকার ও কিচেন সুপারভাইজারের একটি করে পদ খালি। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (রেডিও), মেডিক্যাল টেকনেশিয়ান (ইকো), ওয়ার্ড মাস্টার ও স্টেরিলাইজার কাম মেকানিকের ২টি করে পদ শূন্য রয়েছে। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ফিজিওথেরাপি), মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল), লিলেন কিপার ও টিকেট ক্লার্কের ৩টি করে পদ খালি রয়েছে।

মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (রেডিওথেরাপি) ও জমাদ্দারের ৪টি করে পদ খালি। কার্ডিওগ্রাফার, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, স্ট্রেচার বেয়ারারের ৬টি এবং মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের (ল্যাব) ৭টি পদ শূন্য। তাছাড়া অফিস সহায়কের ২৫টি পদের মধ্যে আজ পর্যন্ত একজনকেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

উল্লেখ্য যে, কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের যশোদল এলাকায় অবিস্থত ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে এই হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চাহিদার এক তৃতীয়াংশ চিকিৎসকও বর্তমানে এই হাসপাতালে কর্মরত নেই। তাছাড়াও নার্সসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ও ৩য়-৪র্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে। এমতাবস্থায় হাসপাতাল পরিচালনা ও রোগীদের ভিড় সামাল দিতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রীতিমত হিমসিম খাচ্ছেন। বর্তমান সৃষ্ট পদের চেয়ে দ্বিগুণেরও অধিক পদ সৃজন করে সেখানে অবিলম্বে চিকিৎসক নিয়োগ ও অন্যান্য শূন্য পদ পূরণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা।

শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যার চিত্র তুলে ধরে বলেন, তন্মধ্যে চিকিৎসক সংকটই তীব্র। আউটডোরে গড়ে এক হাজার থেকে দেড় হাজার রোগীর ভিড় সামাল দিতে কর্তব্যরত ডাক্তারদের হিমসিম খেতে হয়। ৮৫ জন চিকিৎসকের মধ্যে গড়ে ৮/১০ জন ছুটিতে থাকেন। ইনডোরে গড়ে ছয় শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। রোগীর চেয়ে রোগীর আত্মীয়স্বজনদের সংখ্যাই থাকে বেশি। দ্রুত সমস্যার সামাধান করতে হলে অবিলম্বে নতুন পদ সৃজন করে অন্তত: ২০০ চিকিৎসক নিয়োগ দিলে হাসপাতালের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া যেতো বলে মনে করেন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক। তিনি জানান, হাসপাতালের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।