তিতাস (কুমিল্লা) সংবাদদাতা : কুমিল্লার তিতাসে এজহার নামীয় আসামী ধরতে গিয়ে অবরুদ্ধ হওয়া পুলিশ সদস্যদের দুই ঘন্টা পর উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের দড়িকান্দি পূর্ব পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এসময় বাদীর বিরুদ্ধে আসামীকে মারধর করে হাত-পা ভাঙ্গা এবং একই রাতে বাদীর বাড়িতে আসামীদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে।

দু’পক্ষের হামলা-মামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দড়িকান্দি এলাকা জুড়ে থমথমে অবস্থা ও এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের দড়িকান্দি গ্রামের মামলার বাদী পক্ষ জসিম উদ্দিনের ছেলে রাকিব হোসেন ও বিবাদী পক্ষের একই এলাকার মৃত লালা ভূইয়ার ছেলে মাওলান এবং তার ছেলে মাসুদ ভূইয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবসা করে আসছিল। ইন্টারনেট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার বাকবিতণ্ডা হয়। এরই জেরে গত বুধবার (১১ই মার্চ) সন্ধ্যায় কুড়েরপাড় স্ট্যান্ডের সামনে রাকিবকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে জখম করে। পরে বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ই মার্চ) তিতাস থানায় মাসুদ ভূইয়া ও তার বাবা মাওলান ভূইয়াসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। এই মামলার আসামীদের গ্রেফতার করতে শুক্রবার রাত আনুমানিক ১১ টায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইয়ু) এস আই আরিফুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে এজাহার নামীয় আসামী মাওলান ভূইয়ার বাড়িতে গিয়ে ঘরে সার্চ করে কাউকে না পেয়ে আসামীর স্ত্রী মাকসুদার সাথে পুলিশ কথা বলেন, গ্রেফতার অভিযানের বিষয়টি বাদীপক্ষের লোকজন টের পেয়ে এমন সময় আসামীর বাড়ি থেকে পাঁচশ গজ দূরে জালাল সরকারের বাড়িতে আসামী মাওলান ভূইয়াকে আটক করে বাদী রাকিব ও তার লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়। এসময় ডাক চিৎকারে আশেপাশে লোকজন জড়ো হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়, পরে আসামী পক্ষের লোকজন ও স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ সঙ্গীয় ফোর্সদের একটি ঘরে ২ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্থানীয় উপজেলা বিএনপি নেতাদের সহযোগিতায় অবরুদ্ধ থাকা পুলিশ সদস্যদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সেই রাতেই মাওলানের লোকজন মামলার বাদী রাকিবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে একটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ উঠে।

এঘটনার বিষয়ে অভিযোগ তুলে আহত মাওলান ভূইয়ার স্ত্রী মাকসুদা বলেন, রাত আনুমানিক ১১টায় পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে আমার ঘরে ঢুকে তল্লাশি করে কাউকে পায়নি এমন সময় পুলিশ আমাদের বাড়িতে থাকা অবস্থায় শুনতে পাই জালাল সরকারের বাড়িতে আমার স্বামীকে মেরে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে রাকিব, সাঈদ, বিল্লাল ও স্বপন গং আমি এর সঠিক বিচার চাই।

অপরদিকে পাল্টা অভিযোগ তুলে মামলার বাদী রাকিবের মা মিসেস শিরিন বলেন - আমার ছেলে রাকিব মিয়াকে গত ১১/০৩/২৫ তারিখ সন্ত্রাসী মাসুদ ও সাইফুল গংরা হামলা করে বর্তমানে আমার ছেলে ও স্বামীকে ঐ মামলায় শুক্রবার রাতে পুলিশ আসামী ধরতে আসে। তখন আসামীদের আতংকে নিজের ঘরে তালা দিয়ে আমার জালের ঘরে ছিলাম, পরে সেই ঘরে লুটপাট চালিয়ে আগুন দেয়।

তিতাস থানার ওসি মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ বলেন, যেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে সেখানে পুলিশ ছিল না। পুলিশ ছিল পাশের একটি বাসায়। হামলাকারীদের না পেয়ে লোকজন পুলিশের সাথে উত্তেজিত ব্যবহার করে এবং অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি টিম নিয়ে আমি গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে তাদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি এবং অবরুদ্ধ থাকা পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে আনি।