কবির আহমদ, সিলেটঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, গত তিনটি নির্বাচনে মানুষ তার পছন্দের দল বা ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারেনি। এরকম নির্বাচন হলে জাতির জন্য দুঃখের ও বেদনার কারণ হবে। নির্বাচনের আগে অন্তত দুই-চারজন শীর্ষ অপরাধীদের শাস্তি দেখতে চাই। তিনি বলেন আগামীতে যেই সরকারে আসুক তাকে অপরাধীদের শাস্তি বা বিচারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। তা না হলে যুবকরা আবার রাস্তায় নেমে আসবে, তারা এখন পথ চিনে ফেলেছে।

তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের শাহী ঈদগাহস্থ শিল্পকলা একাডেমীর হলরুমে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।

আমীরে জামায়াত বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্র-জনতা তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে ফ্যাসিবাদের যাতাকল থেকে জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন। তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। গণঅভ্যুত্থানের পরপরই জামায়াত শহীদ ও আহত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। এখনো আছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে। কিন্তু ছাত্র-জনতার রক্তের উপর দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালিন সরকার শহীদ ও আহতদের জন্য কার্যকর তেমন উদ্যোগ নেয়নি। যা দুঃখজনক। আল্লাহ যদি সুযোগ দেন- আমরা ক্ষমতায় গেলে সবার আগে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিবো।

তিনি বলেন, আমরা আশা করবো আগামী বছরের শুরুর দিকে দেশে একটা জাতীয় নির্বাচন হবে। তবে মৌলিক সংস্কার ও দৃশ্যমান দুয়েকটা বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সেটাও সম্ভব হবেনা। আমার আগের মতো যেনতেন কোন নির্বাচন চাইনা, হতেও দিবোনা। আমরা জানি এই সময়ে সব বিচার ও সংস্কার সম্ভব না। এজন্য পরবর্তী সরকারের উচিত বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া। এ নিয়ে ধানাইপানাই করলে পরিনতি ভালো হবেনা। কারণ যুবকরা পথ চিনে ফেলেছে। তারা অধিকার প্রতিষ্ঠায় ফের রাজপথে নেমে আসবে।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী জামায়াত ঘোষিত টানা ৩৮দিনব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে উক্ত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুল ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর যৌথ পরিচালনায় আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে সিলেটের শহীদ পরিবারের সদস্যগণ ও বিপুল সংখ্য আহত জুলাই যোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, যাদের জীবন বাজী ভুমিকায় আমরা ফ্যাসিস্ট মুক্ত দেশ পেয়েছি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। জুলাই আন্দোলনে আমরা কখনোই নিজেদের মাস্টারমাইন্ড দাবি করিনা। তবে আমাদের অবদান অন্যরা স্বীকার করছেন। আমরা শুধু বলি আমরা মজলুম ছিলাম, ফ্যাসিস্টদের পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার সাথে ছিলাম। ভবিষ্যতেও দেশ-জাতির যে কোন প্রয়োজনে আমরা পাশে থাকবো। আমরা মজলুম দল। তবে একা আমরা নই। দীর্ঘ ১৬টি বছর দেশের অনেক রাজনৈতিক দল, আলেম-উলামা ও সাংবাদিকসহ অনেকেই ফ্যাসিস্টের জুলুমের শিকার হয়েছিলেন। আমাদের উপর শুধু জুলুমই করা হয়নি, নিষিদ্ধও করা হয়েছিল। ছাত্ররা ডাক দিয়েছিল। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলাম। বিজয় নিশ্চিত হয়েছে। আমরা সকল শহীদ ও আহতদের পাশে ছুটে গেছি। এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। আমরা সকল শহীদ ও আহতদের পরিবারের কাছে চিরঋণী।

তিনি আরও বলেন, আমরা জুলুম-নিপীড়নের শিকার হয়েছি, দেশ ছাড়িনি। কোনদিন ছাড়বোনা। বিগত সময়ে জুলুমের মাত্রা দেখে কোন কোন ব্যক্তি ও দেশ হেকমতের অংশ হিসেবে আমাদেরকে আশ্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা বলেছি নিরাপত্তা দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। এই দেশটা আমাদের, যতদিন আল্লাহ হায়াত দেন এইদেশেই ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের চেষ্টা করে যাবো।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, সিলেট জেলা আমীর ও সিলেট-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান।

জামায়াত নেতা শাহজালাল শরীফের কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সুচীত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও সাবেক জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা কাজী মখলিছুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা গাজী রহমতুল্লাহ, প্রখ্যাত আলীমে দীন মাওলানা লুৎফুর রহমান হুমায়দী ও আব্দুস সালাম আল-মাদানী, ৫ আগস্ট কোতোয়ালী থানায় নিহত পংকজ করের পিতা নিখিল চন্দ্র কর, শহীদ শাহজাহানের ভাই পারভেজ মিয়া, শহীদ রায়হান উদ্দিনের ভাই সিয়াম উদ্দিন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলার সমন্বয়ক আবু সাঈদ। ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন দিশারী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা এবং মাইলস্টোন কলেজ ট্রাজেডীতে নিহতদের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা এবং দেশ জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান।