গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : গ্রামের হাটে এখন আর আগের সেই ভিড় নেই। একসময় হাট বসলেই কৃষকরা ছুটে যেতেন লাঙ্গল, দা, কোদাল, ছুরি বা কাস্তে কিনতে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত এসব লোহার যন্ত্রপাতি ছাড়া যেন চাষাবাদের কাজ অসম্পূর্ণ ছিল। কিন্তু যান্ত্রিক কৃষির আগ্রাসন ও মানুষের পেশা পরিবর্তনের ফলে আজ এসব পণ্যের ক্রেতা কমে এসেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটে দেখা যায়, একপাশে বসে আছেন স্থানীয় লোহার সরঞ্জাম বিক্রেতারা। তাদের সামনে সাজানো রয়েছে নানা রকম কৃষি উপকরণ ছোট-বড় দা, কাস্তে, কোদাল, শাবল, চেইন, হাতুড়ি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি পর্যন্ত। কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে।

একজন বিক্রেতা জানান, “আগে সপ্তাহে এক হাটে পাঁচ-ছয় হাজার টাকার বিক্রি হতো, এখন এক হাজার টাকাও ওঠে না অনেক সময়। মানুষ এখন মেশিনে কাজ করে, কাস্তে-কোদাল তেমন লাগে না।”

মন্দার কারণ: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণের ফলে হাতে তৈরি লোহার সরঞ্জামের ব্যবহার কমে গেছে। ধান কাটার মেশিন, ঘাস কাটার মেশিন, মাটি কোপানোর ট্রাক্টর- এসব আধুনিক যন্ত্রই কৃষকের কাজকে সহজ করছে। ফলে ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প ও এ যন্ত্রপাতি বিক্রেতারা পড়েছেন চরম সংকটে।

তবুও টিকে থাকার লড়াই:

অনেকে বলছেন, এটা কেবল ব্যবসা নয়- বংশ পরম্পরায় চলা একটি পেশা। তাই যত কষ্টই হোক, তারা এখনো হাটে বসেন। কারও কাছে এটি জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। “ব্যবসা এখন ধীরগতির, কিন্তু সম্পূর্ণ বন্ধ করতে পারবো না,” বললেন এক বিক্রেতা, “আমার বাবা যেমন এই ব্যবসা করতেন, আমিও করছি।”

কামারশিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় উদ্যোগ প্রয়োজন:

স্থানীয় অর্থনীতিবিদদের মতে, লোহা পণ্য উৎপাদন ও বিক্রিতে যারা যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসন বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি। সরকারের ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা, বাজার সম্প্রসারণ এবং আধুনিক যন্ত্রের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী সরঞ্জামের চাহিদা ধরে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ২০২০ সালের পর থেকে হাতে তৈরি যন্ত্রের ব্যবহার কমেছে প্রায় ৬৫%।