বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আজ থেকে ৩০ বছর আগে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন সেই সময় আর বর্তমান প্রেক্ষাপট সামনে রেখে আমাদের চিন্তা করা দরকার। কারণ এই পৃথিবীতে ইসলাম একটি নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো। একজন মাত্র ব্যক্তি গত শতাব্দীতে জোরেসুরে উচ্চারণ করেছিলেন তাঁর নাম হচ্ছে সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদী (রহ.)। ১৯৪১ সালের দিকে তিনি একটি আহ্বান জানিয়েছিলেন যুব সমাজকে লক্ষ করে। হে যুব সমাজ তোমরা জেগে উঠো। বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপট ঘোষণা করছে আগামী শতাব্দী হবে ইসলামের শতাব্দী। আজকে একটি হিসেবে মিলিয়ে নিতে হবে আমাদেরকে কারণ পৃথিবীর ইতিহাস বলছে প্রত্যেক শতাব্দীতে একটি পরিবর্তন হয়। তাহলে এই শতাব্দীর পরিবর্তনটা কোন দিকে হবে? তার একটি সুবেহ সাদিক আমরা দেখতে পাচ্ছি এবং যুক্তি দিয়েই এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে। বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের পলিসিও সেভাবেই ঠিক করতে হবে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত ময়মনসিংহ মহানগর ও সদর উপজেলায় বসবাসকারী ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক ভাইদের নিয়ে প্রীতিমিলীন ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মহানগর জামায়াতে আমীর মাওলানা কামরুল আহসান এমরুলের সভাপতিত্বে ও সহকারী সেক্রেটারি আনোয়ার হাসান সুজনের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, গত শতাব্দীর শুরুতে পরিবর্তনটা হয়েছিলো সমাজতন্ত্রের নেতৃত্বে।
১৯১৭ এবং ১৯২৩ সালের মধ্যে পৃথিবীতে কমিউনিজম কায়েম হয়েছিলো ১২টি রাষ্ট্রে। আবার এই সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছিলো ৭২ বছর পর। দুনিয়াতে এত অল্প সময়ের আয়ু নিয়ে কোন মতবাদ আসেনি যেটা সমাজতন্ত্রে এসছিলো। কারণ এটার একটা রিয়েকশন থেকে এটার জন্ম হয়েছিলো। পুঁজিবাদের রিয়েকশন থেকে সমাজতন্ত্রের উত্থান। ফলে রিয়েকশন থেকে যার জন্ম হয়, যার উত্থান হয় তার পতনও খুব তাড়াতাড়ি হয়। আজকেও বাংলাদেশে রিয়েকশন থেকে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্ভব ঘটতে যাচ্ছে বা হয়েছে এটার আয়ুষ্কালও খুব বেশিদিন হবে না। যদিও আমরা চাই যে তারা দীর্ঘায়ু লাভ করুক। কিন্তু এটা বেশি লম্বা হওয়ার কথা নয়। আন্তর্জাতিক সূত্র এটা বলে না, রাজনৈতিক সূত্রও এটা বলে না। সমাজতন্ত্রের পতন হওয়ার পৃথিবীটা চলে গিয়েছিলো একটি একক নেতৃত্বের আওতায়। সেটার নাম হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের সামনে দাঁড়ানোর আর কেউ ছিলো না। ঠিক এই সময়ে কয়েকজন ইহুদী পণ্ডিত বলেছিলেন যে পৃথিবীতে একটি সভ্যতার উত্থান অল্প সময়ের মধ্যে হবে এবং সে সভ্যতার সাথে অস্ত্রের লড়াই এর সাথে ঠিকবে না। এই সভ্যতাকে যদি সভ্যতা, কৌশল দিয়ে মোকাবেলা করা যায় তাহলে সেই সভ্যতাটা ধ্বংস হবে নতুবা সেই সভ্যতাটিই আগামীদিনের পৃথিবী শাসন করবে তার নাম হচ্ছে ইসলামী সভ্যতা। এই বক্তব্য দেয়ার পরই আমেরিকা এটার কাউন্টার করার জন্য একটি ব্যবস্থা বিশ্ববাসীর সামনে দাঁড় করিয়েছিলো যার হচ্ছে পৃথিবী পরিচালনা করার নতুন পদ্ধতি বা ব্যবস্থা। এই ব্যস্থার মধ্যে কমপক্ষে সাতটি রাষ্ট্রে ইসলামী সভ্যতার জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিলো। এই জাগরণে দিশেহারা হয়ে আমেরিকা মুসলিমদের মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব তৈরি করার চেষ্টা করেছিলো এবং এই দ্বন্দ্ব থেকেই মুসলিম শক্তি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল বায়তুল মুকাদ্দাস হামলার পর যে ঐক্য গড়ে উঠেছিলো সেই ঐক্যটি ভেঙে যায়। আল্লাহর রহমতে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পর আজকে একটি নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত আমাদের সামনে দেখতে পাচ্ছি। আপনারা জানেন তিন মাসের মধ্যে অনেক বড় ঘটনা বাংলাদেশে বিশ্ব রাজনীতির মধ্যে ঘটে গেছে। প্রথম যেটা ঘটেছিলো ভারত এবং পাকিস্তান। পেহেলগামের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত পাকিস্তানের উপর হামলা করেছিলো।
তিনি বলেন, আসলে এটা পাকিস্তানের উপর হামলার উসিলা ধরে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে এই দেশের রাজনীতিতে ভারতীয় মদদপুষ্ট শক্তিকে ক্ষমতায় আনার একটা পরিকল্পনা ছিলো। আপনারা এটা খুব ভালোভাবে খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন যে ওই সময়ে সেনাপ্রধানের একটি বক্তব্য এর পরে বিএনপি’র ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতেই হবে বক্তব্য এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য সব বক্তব্য একাকার হয়ে পাকিস্তান ভারতে এই লড়াইকে বাংলাদেশর উপর ভারতের আগ্রাসন অথবা আওয়ামীলীগকে এখানে প্রবেশের একটি পথ প্রশস্ত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানী এই যুদ্ধে ভারত পরাজতি হয়েছে। একটি মাত্র নারী পাইলটের আক্রমণের মাধ্যমে ভারত সর্বশান্ত হয়েছে। ফলে ভারত নীরব হয়ে গেছে। বাংলাদেশে যারা ভারতমুখী শক্তি তারাও অনেকটা নীরব হয়ে গেছে। এইবার আরো একটি ষড়যন্ত্র হয়েছিলো যে ইজরায়েল কোনভাবেই মুসলিম শক্তির পুনরুত্থানকে বরদাস্ত করতে রাজি নয়। তারা ইরানের উপর হামলা করলো। এমন হামলার পরিকল্পনা কয়েক বছর যাবৎ চলছিলো। সুনিপুণভাবে গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ৬জন পরমাণুবিজ্ঞানী সহ ২২০ জন সামরিক কর্মকতাকে তারা হত্যা করেছে। তার পাল্টা জবাব দিয়েছিলো ইরান।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের এই প্রেক্ষাপটে যারা কথায় কথায় হিসাব নিয়ে আসেন আমাদের চারদিকে ভারত আর আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে ঠিকতে পারবে কিনা? এই প্রশ্নের জবাব আমি দিবো। আপনাদেরকে ঠিক সেভাবেই ভূমিকা রাখতে হবে। এই সময়টা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে জামায়াত যদি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতে না পারে তাহলে আগামীদিনের রাজনীতি যেদিকে প্রবাহিত হবে সেটাকে ঘুরিয়ে আবার আমাদের অনুকূলে আনা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। এই সময়টা জামায়াতের জন্য একটা অনুকূল সময়। আমরা পলিসি নিয়েছিলাম ৫ আগস্টের পর আমরা খুব বেশি বেশি জনসভা করবো না। কেন্দ্রীয়ভাবে গত ১ বছরে আমরা কোন জনসভা করিনি। আগামী ১৯ জুলাই হবে প্রথম জনসভা। এটকাকে জাতীয় সমাবেশ হিসেবে আমরা নাম দিয়েছি। এক বছর পর আমরা সমাবেশ করতে চাচ্ছি। এটার একটা কারণ আছে। এটার একটা পলিসি আমরা নিয়েছি। মাঝখানে যে কাজগুলো আমরা করেছি এই কাজগুলো গত এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে তার মধ্যে একটি হলো বিশ্ব রাজনীতিতে যদি আপনাকে নেতৃত্ব দিতে হয়, ঠিকে থাকতে হয়, ভারসাম্যতা আনতে হয় এবং আপনাকে গণনার মধ্যে যদি উপস্থাপন করতে চান তাহলে আপনাকে কূটনীতিতে এগোতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে নিয়োজিত সকল দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত করেছে। কূটনীতিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী এক নম্বর পজিশনে আছে। আমাদের রাশিয়ার এম্বাসেডর আমাদের ব্যক্তিগতভাবে দাওয়াত দিয়েছে। ইরানের সাথেও আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। ইরান তো পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো।
মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, মুসলিম বিশ্বের একটি শক্তি ইরান আত্ম প্রকাশ করালো। শিয়ার ব্যাপারে অনেক মতবেদ আছে। জামায়াত শিয়াকে সমর্থন করে কিনা এব্যাপারেও বিতর্ক আছে। অনেক হিসাব করেই আমরা ইরান দূতাবাসে গিয়েছিলাম। ইরান যদি জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের সাথে রাজনৈতিকভাবে রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ থাকে তাহলে অনেক সুবিধা। ভারতে পুরো প্রযুক্তি হলো ইরান নির্ভর। ভারতে জ্বালানির ৩০ শতাংশ ইরান নির্ভর এবং ভারতের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ইরান নির্ভর। জামায়াতে ইসলামীর সাথে যদি আল্লাহ তায়ালা ক্ষমতা তুলে দেন ভারত বাংলাদেশের উপর কোন আগ্রাসন চালাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। এই কূটনীতিকে আমরা সামনে রেখেছি।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর জামায়াতের সহ-সেক্রেটারি মাহবুবুল হাসান শামীম, বায়তুলমাল সম্পাদক গোলাম মহসীন খান, অফিস বিভাগের সেক্রেটারি খন্দকার আবু হানিফ, প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বারী, কর্মপরিষদ সদস্য ডাঃ আব্দুল আজিজ, মোঃ হায়দার করিম, মহানগর শিবিব সভাপতি শরিফুল ইসলাম খালিদ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি ফখরুল ইসলাম সহ মহানগর জামায়াত ও শিবিরের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।