খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত খুলনা-৩ আসন। জাতীয় সংসদের ১০১ নম্বর এই আসনটি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের মাঠ গোছাচ্ছেন এ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা। তারা নিজ নিজ এলাকায় লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠক, ভোট কেন্দ্র প্রতিনিধি সমাবেশ ও গণসংযোগ বাড়িয়েছেন। শিল্পাঞ্চল খ্যাত এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নজর বন্ধ শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের দিকে। গণসংযোগে তারা বন্ধ শিল্পকল কারখানা চালুসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এ আসনে নির্বাচনের মাঠে জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, এনসিপির প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়ার মতো।

খুলনা জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, এ আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৩, নারী ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৩০ ও হিজড়া ভোটার ৫ জন।

খুলনা-৩ আসনে দলীয় ও নির্বাচনী কর্মকান্ড চালাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম এবং নাগরিক পার্টি থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এস এম আরিফুর রহমান মিঠু। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল ও খেলাফত মজলিসের এফ, এম, হারুন-অর-রশীদ প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থী যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জনি।

দিনক্ষণ ঠিক না হলেও আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ব্যস্ত সময় পার করছেন। নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী করাসহ নানামুখী কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন তিনি। প্রতিদিনই এলাকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন মাহফুজুর রহমান। অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে খুলনা-৩ আসনে কাজ করার জন্য আমাকে বলা হয়েছে। সে হিসেবে কাজ শুরু করেছি। মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের হাওয়া। মানুষ এবার ইসলামের পক্ষের শক্তিকে দেখতে চায়। আমরা মানুষের অনুভূতিকে মূল্যায়ন করছি। মানুষের সাথে কথা বলে বুঝতে পারছি তারা শিল্পাঞ্চলের পুনরুদ্ধার চায়। খালিশপুর-দৌলতপুর এক সময় শ্রমিকদের কাজে মুখরিত থাকতো এখন সেখানে মৃত্যুপরী। আল্লাহ যদি আমাদের সুযোগ দেয় প্রথম কাজ হবে বন্ধ শিল্পকল কারখানা কিভাবে চালু করা যায় তা নিয়ে কাজ করা। এর সাথে জড়িতদের কর্মসংস্থান করা। শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা, স্যুয়ারেজ সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা যা আছে তার দিকে নজর দেবো। আমরা এখনও আমাদের সেবামূলক কাজের মধ্যে দিয়েও এসব কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। আরও করবো। ইনশাল্লাহ আমরা আশাবাদী মানুষের এ অনুভূতি ধরে রাখতে পারলে জয়ী হতে পারবো।

বর্তমানে খুলনা বিএনপির সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল। ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই ফজলুল হক হল ছাত্রদল কর্মী হিসাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। এরপর হল কমিটির সহ-সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক, ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রদলের নির্বাচিত জিএস, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের দু’বার সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। বর্তমানে রকিবুল ইসলাম বকুল বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হন তিনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, আমরা রাজপথে ছিলাম এবং এখনো আছি। বিএনপি নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার আছে। যদিও অন্তবর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের মোটামুটি একটি রোড ম্যাপ দিয়েছে। তবে নির্দিষ্ট তারিখ দেয়নি। এই মুহূর্তে যদি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে তাহলে সকল প্রস্তুতি নেওয়া আছে আমাদের। তিনি বলেন, খুলনা শিল্পাঞ্চলকে এখন আর শিল্পাঞ্চল বলা চলে না। এটা একটা মৃত্যুপুরী। বিগত সরকার লুটপট করে রাতের আঁধারে পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়। তারা শ্রমিকদের কোন দাবি পূরণ করেনি। শ্রমিকদের স্থানচ্যুত করেছে। আমরা শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল। আমরা যদি দায়িত্ব পাই ইনশাল্লাহ মৃত্যুপ্রায় শিল্পনগরীকে আধুনিক শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো।

মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম। শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা হিসাবে এলাকায় তার সুখ্যাতি আছে। অর্ধশত মামলা ছিল তার বিরুদ্ধে। জেলও খেটেছেন বহুবার। হয়েছেন নির্যাতনের শিকার। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন তিনি।

অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৮ এবং ২০১৮ সালে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। রাজনৈতিক জীবনে সূচনা থেকেই একজন পার্লামেন্টেরিয়ান হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। ৩৬ জুলাই ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ যেমন প্রার্থী ডিমান্ড করে দলের হাইকম্যান্ড সেটা কার্যকর বিবেচনায় নিলে আমি ১০০% আশাবাদী। ইনশাআল্লাহ ধানের শীষ আমার হাতেই তুলে দেবেন আমার নেতা। দলের জন্য আমার অবদান, ত্যাগ, লড়াই সংগ্রামে অকুতোভয় ভূমিকা, নির্বাচনী এলাকায় ভালো ও সৎ সজ্জ্বন মানুষ হিসেবে সুপরিচিতি, মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ নির্লোভ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা এবং একটা সাইলেন্ট পপুলারিটি এগুলো আমার লড়াইয়ের প্রেরণা।

খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এনসিপির সংগঠক এস এম আরিফুর রহমান মিঠু খুলনার অন্যতম একজন ব্যবসায়ী। মিঠুর পিতা খুলনা-৩ আসন থেকে একবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। তখন তিনি ৩০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে এস এম আরিফুর রহমান মিঠু এ আসনের প্রার্থী হওয়ার জন্য গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। যে কারণে তার একটি অনুসারীও গড়ে উঠছে। বিএনপি থেকে তিনি এনসিপিতে যোগদান করায় ছাত্রদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

আরিফুর রহমান মিঠু বলেন, আমরা চাই খুলনার খালিশপুর দৌলতপুরকে নতুনভাবে গড়তে। শিল্পাঞ্চল সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই খুলনার শিল্পাঞ্চলের খারাপ অবস্থা শুরু। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মিলে খুলনার বিভিন্ন মিল কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এ মিলগুলোকে আবার চালু করবো।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল বলেন, আমি যদি নির্বাচিত হই ইনশাআল্লাহ সাধ্য অনুযায়ী কাজ করব। বন্ধ শিল্পকর কারখানা চালু করব। মৃত শিল্পাঞ্চল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করব।

যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জনি বলেন, আমিসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থী তিন আসন থেকে গণঅধিকার পরিষদ থেকে মনোনয়ন চাইব। দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমি তার পক্ষে কাজ করব। আমি টুকটাক প্রচার-প্রচারণা করছি। বন্ধ শিল্প কারখানা নিয়ে কথা বলছি। আক্ষেপ করে জনি বলেন, একে একে খুলনার নিউজপ্রিন্ট মিলসহ পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ভোট এলে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দেয় শ্রমিকদের। বন্ধ কলকারখানা চালুর ব্যাপারে। কিন্তু পরে ভুলে যায়। আল্লাহ যদি আমাদের ওই জায়গায় নেয় আর আমি যদি পাশ করি, তাহলে শিল্পাঞ্চল নিয়ে কাজ করব। বন্ধ কলকারখানা চালুর ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি জানান।

১৯৯১ সালে বিএনপির মো. আশরাফ হোসেন ৩৮ হাজার ৮৭২ ভোট পেয়ে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম ৩৯ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়ে, ২০০১ সালে বিএনপির মো. আশরাফ হোসেন ৭২ হাজার ২৮৫ ভোট পেয়ে, ২০০৮ সালে ৭৪ হাজার ৬৭৮ ভোট পেয়ে ও ২০১৪ সালে ৪৫ হাজার ৯৫০ ভোট পেয়ে বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।