জুবায়ের হোসেন, নাটোর : মুঘল স্থাপত্যশৈলী নাটোরের গুরুদাসপুরের চাপিলা শাহী মসজিদ ‘গায়েবি মসজিদ’ হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৪০০ শত বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিনগম্বুজ ও তিন দরোজার মসজিদটি। অনুমান করা হয়, বাদশা শাহজাহানের সময়কালে ১৬২৮-১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কোনো একসময় মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। নাটোর শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গুরুদাসপুর উপজেলার ৬ নং চাপিলা ইউনিয়নের বৃ-চাপিলা গ্রামে অবস্থিত। সংস্কার করে বর্ধিত অংশে আধুনিকতার ছাপ আনা হলেও কিছু অংশে রেখে দেওয়া হয়েছে পুরোনো নকশা ও কারুকাজ। চাপিলা এক সময় মুঘলদের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মুঘল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মসজিদটি স্থাপন করেন মুনশী এনায়েতউল্লা। এ অঞ্চলের প্রাচীন দুর্গ বিচারালয় কাছারি অট্টালিকা জলাশয় মসজিদ এবং এছাড়া ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন তারিখের আদেশ অনুযায়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে এখানে ফৌজদারি আদালতের খবর পাওয়া যায়। মুঘল শাসনামলে বাদশাহ শাহজাহানের ছেলে সুজা বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন। সে সময় চাপিলা গ্রামে মুঘল সেনাদের ফাঁড়ি ছিল। অনেক প্রশাসনিক বিষয়ের কার্যালয় ছিল। মুঘল শাসন আমলে মানুষেরও বসবাস ছিল চাপিলায়। সে সময় নামাজের জন্য এখানে একটি মসজিদ তৈরি করা হয়। কালক্রমে ধ্বংস হয় চাপিলা নগরী। তারপর বহুদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল এ অঞ্চল। হয়ে পড়েছিল জঙ্গলাকীর্ণ। ১৯৪৭’র পর বসতি গড়তে থাকেন মুর্শিদাবাদ, কলকাতা ও ঢাকা ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। আবারও খুঁজে পাওয়া যায় মসজিদটি। সে সময়ই জঙ্গল পরিষ্কারের সময় এলাকার মানুষ খুঁজে পায় মসজিদটি। অপরূপ সৌন্দর্যের এ মসজিদটির নাম ‘বৃ-চাপিলা শাহি জামে বড় মসজিদ’। তবে দীর্ঘ সময় মসজিদটি জঙ্গলে ঢেকে ছিল মূলত তারা এই জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে মসজিদটি আবিষ্কার করেন। কালক্রমে তারা সংস্কার করে নামাজ শুরু করেন। যেহেতু আশেপাশের অনেক ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনার নিদর্শন পাওয়া যায়। তাই কোন উর্বর মস্তিষ্ক সেই সময়ে প্রচার করে যে এটি এক রাত্রের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। ইট-সুরকি দিয়ে তৈরি প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের মসজিদটির দেয়ালের প্রস্থ ৪ ফুটের মতো। মসজিদটিতে রয়েছে বিশাল আকৃতির তিনটি গম্বুজ ও দুই পাশে দুটি সুউচ্চ মিনার। যা দেখতে সোনালী কালার দূর থেকে দেখলে মনে হয় সোনা দিয়ে মোড়ানো। মসজিদে প্রবেশের জন্য রযেছে তিনটা দরজা প্রতিটি প্রবেশ দরজা নকশা আর কারুকাজে সুসজ্জিত। মসজিদের ভেতর প্রতিটি দেওয়াল ও মেহরাবে চোখ ধাঁধানো নকশা বিভিন্ন কারুকাজ। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে মসজিদটি দেখতে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করে।