পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত টোল আদায়, ভাঙাচোরা পন্টুন, যাত্রীদের সঙ্গে টোল আদায়কারীদের দুর্ব্যবহার, কৌশলে রাজস্ব ফাঁকি ও চরম অব্যবস্থাপাসহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে চলছে খুলনার রূপসা ঘাটে। নদীপথে সবচেয়ে বেশি মানুষ পারাপার হয় এ ঘাট দিয়ে। তিন সংস্থার বিরোধে চলছে একাধিক মামলাও। সবকিছু মিলিয়ে রূপসা ঘাটে ‘হযবরল’ অবস্থা তৈরি হয়েছে। সূত্র জানান, নদীপথে খুলনা মহানগরীতে প্রবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাট রূপসা। প্রতিদিন অন্তত ২০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন এই পথে। তবে পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত টোল আদায়, পারাপারে ট্রলার ভাড়া বৃদ্ধি থেকে যাত্রী লাঞ্ছনা ঘাটের নিয়মিত ঘটনা। রূপসা ঘাটের ভাঙা-চোরা দুটি পন্টুনের বেহাল দশা। বড় বড় ফাঁক ফোকর আর উঁচু-নিচু পন্টুনেই যাত্রীরা পড়ে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সম্প্রতি ভাঙাচোরা পন্টুন থেকে পড়ে একটি শিশুর মৃত্যুও হয়েছে। ওই সময় সতর্কতা ব্যানার টাঙিয়ে এক পাশের পন্টুন ব্যবহার বন্ধের নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে নৌ-যান চালকরা মানেননি সেই নোটিশ।

টোল বৃদ্ধি হলেও ঘাটের চরম অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ যাতায়াতকারীরা। এ ঘাট দিয়ে নিয়মিত পারাপার করা মো. আব্দুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘাটে ট্রলার পারাপারে আগে জনপ্রতি ২ টাকা করে নেয়া হত। এখন বাড়িয়ে ৪ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ছোট ছোট পণ্যের ক্ষেত্রেও ঘাটে ৫০-১০০ টাকা, কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশিও নেয়া হয়। এছাড়া রূপসা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এস এম মাহবুবুর রহমান ও রবিউল ইসলাম তোতার সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হুমকির অভিযোগও রয়েছে ঠিকাদার পক্ষের বিরুদ্ধে। বিষয়গুলো নিয়ে সাংবাদিক ও স্থানীয়রা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করেন।

এদিকে, ঘাটটি টোল মুক্ত করতে ও ফেরির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণস্বাক্ষর কর্মসূচিসহ বিভিন্ন ভাবে ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন স্থানীয় সামাজিক সংগঠন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তবে পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত টোল আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করে ঘাট সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদনের কথা জানিয়েছেন ঘাট ম্যানেজার মো. জাহিদুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক টাকা ব্যয় করে গ্যাংওয়েতে কাজ করেছি। আট মাস আগে নতুনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ভাঙা পন্টুন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সরিয়ে নেওয়ার কথা। কিš‘ এসব না হওয়ায় সংকট কাটছে না।’

এদিকে ঘাটের দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে সিটি করপোরেশন, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং জেলা পরিষদের মধ্যে। চলছে একাধিক মামলাও। গত বছর সেপ্টেম্বরে কেসিসি থেকে ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জনপ্রতি এক টাকা থেকে দুই টাকা করে টোল নির্ধারণ করে বিআইডব্লিউটিএ। এতে রাজস্ব দ্বিগুণ হওয়ার কথা থাকলেও ঘটছে উল্টো। যেখানে কেসিসি গড়ে প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকার বেশি টোল আদায় করতো। সেখানে বিআইডব্লিউটএ গড়ে আদায় করেছে দুই লাখ টাকা।

টোল আদায়ের এমন ছন্দপতনের কারণ হিসেবে বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ খুলনা’র ঊর্ধ্বতন উপ-পরিচালক মোহা. মাসুদ পারভেজ জানান, এক বছরে একাধিক বার দখল পাল্টা দখলেই কারণেই এমন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছেন এবং আমাদের আইন বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা দেওয়ার জন্য।