বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। গতকাল সোমবার দুপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দুই আসামির ফাঁসির রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সব আন্তর্জাতিক নর্মস, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটির মতো কমপ্লেক্স অপরাধের বিচার করতে সক্ষম এবং বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে সেটা করেছে। রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, যে ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ এই আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো আদালতের স্ট্যান্ডার্ডে এই সাক্ষ্য প্রমাণগুলো উতরে যাবে। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজকে যেসব আসামিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তারা প্রত্যেকেই একই শাস্তি প্রাপ্ত হবে।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দেওয়া রায় প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির প্রতিজ্ঞা। আমি মনে করি, এই রায় কোনোভাবেই অতীতের কোনোকিছুর প্রতিশোধ নয়। এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির প্রতিজ্ঞা। এটি ন্যায়বিচারের জন্য যাত্রা। এই রায় প্রমাণ করেছে অপরাধী যত বড় হোক, যত ক্ষমতাশালী হোক, সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে যত বড় অপরাধী হোক, অপরাধের জন্য তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে, বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এটাও প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক প্রথা, মান বজায় রেখে মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো জটিল অপরাধের বিচার করতে সক্ষম। বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে সেটা করতে পেরেছে।

এ রায়ের ফলে যে এক হাজার ৪০০ তরতাজা তরুণ প্রাণ দেশে স্বৈরশাসন অবসান করার জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের পরিবারে যদি সামান্য একটু স্বস্তি আসে, সেটাই প্রসিকিউশনের প্রাপ্তি বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, ‘একটি বিচারিক প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করার মাধ্যমে এই জাতিকে বিচারহীনতার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার আমাদের যে ক্ষুদ্র প্রয়াস, সেটা যদি সফল হয় সেটাতেই আমাদের সাফল্য।’

ফাঁসির রায়ে কষ্ট পেয়েছি, আমি ক্ষুব্ধ: হাসিনার আইনজীবী

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদ-ের রায়ে কষ্ট পেয়েছেন আইনজীবী আমির হোসেন। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা জানান। আমির হোসেন রায় মেনে নিয়ে বলেন, রায়টা আমার পক্ষে হয়নি, বিপক্ষে গেছে। এজন্য আমি ক্ষুব্ধ। কষ্ট লালন করতেছি। আসামিদের ফাঁসির রায়ে আমি কষ্ট পেয়েছি।

গতকাল সোমবার রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে আপনি কোনো রকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আমির হোসেন বলেন, আমি চেষ্টা করিনি। চেষ্টা করার কোনো বিধানও নেই। ওনারাও আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগের চেষ্টা এবং কোনো রকমের কোনো সহায়তাও করেনি। প্রচ্ছন্নভাবেও যদি কোনো সহায়তা করতো সেটা আমার জন্য আরো ভালো হতো, কিন্তু সেটা কেউ করেনি। আইনগতভাবে বিধানও নেই।

রাজসাক্ষী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উনি আমার মক্কেল না। ওনার সম্পর্কে আমার কোনো কথা বলাও ঠিক না। কারণ আমি যাদের পক্ষে মামলা লড়ি তাদের পক্ষেই আমার বলা উচিত। যারা আমার আসামি না তার পক্ষে আমি কেন বলব, এটা বলা ঠিক না, এটা সমীচীন না। আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, আমার এই মামলায় কোনো আপিল করার সুযোগ নাই। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার ক্লায়েন্টরা এসে মাননীয় ট্রাইব্যুনালে সারেন্ডার করবেন অথবা তারা কোনোভাবে গ্রেপ্তার হবেন। এর আগ পর্যন্ত আপিলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ঘোষিত রায় নিয়ে নিজের কষ্টের কথাও জানান এ আইনজীবী। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায় আমি মেনে নিচ্ছি। কিন্তু রায় ভিন্নভাবেও হতে পারতো। রায়ের বিষয়ে নিজের অসন্তুষ্টির কথা সরাসরি স্বীকার না করে তিনি বলেন, এটা আমার বিপক্ষে গিয়েছে। সেজন্য আমি আমার ভিতরে কষ্ট লালন করছি।

যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের কাছে মনে হয়েছে আমার যুক্তির চাইতেও উনাদের যুক্তি আরও বেশি স্ট্রং। সেটা মনে করে তারা সেইভাবে রায় দিয়েছেন অথবা আমারটা নেয়নি। এটা আমি বলব এই রায়ে আমি কষ্ট পাচ্ছি। উল্লেখ্য, গতকাল ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়।