গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারকে আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। এছাড়া এখনও গুম থাকা তিন শতাধিক ব্যক্তিকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর তারা জীবিত না থাকলেও সেটিও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের পরিবারকে জানাতে হবে। এটি করতে ব্যর্থ হলে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদি শাসন ব্যবস্থা কায়েম হবে এবং গুমের সাংস্কৃতি ফিরে আসবে। দেশের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ খুলনা ইউনিট আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এ সব দাবি জানানো হয়। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে এবং গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ উপলক্ষে শনিবার (৩১ মে) বেলা ১১ টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী কে.এম. জিয়াউস সাদাত। সঞ্চালনা করেন ‘অধিকার’ খুলনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান। অধিকারের বিবৃতি পড়ে শোনান মানবাধিকার কর্মী জি.এম. রাসেল ইসলাম।

মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সহকারী মহাসচিব ও দৈনিক আমার দেশ’র খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন, বিএফইউজে’র সাবেক সহ-সভাপতি ও দৈনিক মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার মো. রাশিদুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক সংগ্রামের খুলনা ব্যুরো প্রধান আব্দুর রাজ্জাক রানা, গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলা শাখার আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এডভোকেট বাবুল হাওলাদার, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন শেখ, গুমের শিকার হয়ে ফিরে আসা খুলনার টুটপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. ইমরান হোসেন ও খুলনা ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি শেখ মো. ফারুক। মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর শাখার সহ-সভাপতি শেখ মুহা. নাসির উদ্দিন, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হিমালয়, খুলনা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও একুশে টেলিভিশনের খুলনা প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম নূর, বানিয়াখামার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মো. শহীদুল ইসলাম, দৈনিক মানবকণ্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান মো. জামাল হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সিবিএ খুলনার সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক মো. আব্দুল হান্নান, মো. আমিরুল ইসলাম, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. মিশারুল ইসলাম মনির, এসএম জসিম উদ্দিন, ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল রিপন, মো. হাবিবুর রহমান, নূর মোহাম্মদ লিটু, এবিএম ফারুক হোসেন, মো. হাফিজ, কলেজ ছাত্র আরিফুল হাসান রিয়াদ, মো. সজল, মো. সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে গুমের শিকার হয়ে ফিরে আসা খুলনার টুটপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. ইমরান হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, তিনি ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর ধর্মসভা রোডস্থ মদনী মসজিদ থেকে এশার নামাজ পড়ে পিকচার প্যালেস মোড়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফেরার সময় সাদা পোশাকে র‌্যাব সদস্যরা চোখ ও হাত বেঁধে একটি সাদা গাড়িতে করে তাকে গুম করে। পরে সেখান থেকে র‌্যাব-৬’র (তৎকালীন নিউজপ্রিন্ট মিল) কার্যালয়ে এবং পরবর্তীতে ঢাকার উত্তরায় র‌্যাব-১’র কার্যালয়ে নিয়ে রাখা হয়। তাকে জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেলে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ক্রস ফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে ‘জঙ্গী’ বলে স্বীকার করতে অমানসিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে তার কানের তালা ফেঁটে যায়। যে নির্যানের যন্ত্রণা এখনও তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন। এভাবে দীর্ঘ এক মাস ২৩ দিন পর সন্দেহজনক ঘোরাফেরার অভিযোগে তাকে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে ২৫ মার্চ উত্তরা থানায় সোপর্দ করা হয়। তিনি তার গুমের সঙ্গে জড়িত র‌্যাবের মেজর শফিউল আজমসহ সকলের কঠোর শাস্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।