কবির আহমদ, সিলেট: ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজের সৌন্দর্য্য বর্ধন করার লক্ষে ব্রিজের দুই প্রান্তে স্টিলের খুটি স্থাপন করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পথচারীরা যেন নিরাপদে পায়ে হেঁটে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাতায়াত করতে পারেন।

কোন এক সময় ছিল সুরমা নদীর উপর নির্মিত সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ও উত্তর সুরমার মানুষের পাড়াপাড়ের একমাত্র ভরসা। এই ব্রিজ দিয়ে ব্রিটিশ আমল থেকে বাস, ট্রাক, অটোরিক্সাসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করত, এগুলো আজ ইতিহাস। বর্তমানে পায়ে হেঁটে কিনব্রিজ কেবল পথচারীদের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই সেতুতেই এখন পথচারিদের চলাচল করা দায়। প্রায় পুরো সেতুই এখন হকারদের দখলে। পথচারীদের চলাচলে পড়তে হয় দুর্ভোগ-দুর্যোগে। পাশাপাশি ছিনতাইকারীদের আনাগোনাতো আছেই।

ঐতিহ্যবাহী এই কিনব্রিজে বিকেলের দিকে গেলে মনে হবে এটা যেন বিরাট এক পাইকারী বাজার। তরি-তরকারি, বাচ্চাদের খেলনা, পেয়াজ-মরিচ, লেফ-তুশক, মাছ-শুটকি, কাপড়, মশারি, হাতঘড়ি, শাক-সবজি, পান-সুপারি, মোবাইল সিম, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, চার্জার, সবই আছে। কিন্তু আসলে এটি বাজার নয় এটি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজের নিত্যদিনের দৃশ্য। এসএমপি’র কোতয়ালী থানার অদূরেই ও সিলেট জেলা পুলিশ সুপারের বাসার দেয়াল ঘেষে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এই কিনব্রিজ। কিন্তু পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে উচ্ছেদ করছে না এই ভাসমান হকারদের। অনেকেই অভিযোগ করছেন পুলিশ সাপ্তাহিক চাঁদা নিয়ে এদের বসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।

প্রতিদিন প্রায় দেড়শ থেকে দুইশ হকার বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে ব্রিজের দুইপাশে বসেন। ব্রিটিশ আমলে সিলেটের সুরমা নদীতে নির্মিত কিনব্রিজের ওপর অবৈধভাবে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট বসিয়েছেন তারা। অনেক পথচারী পণ্য কেনা বা দরদাম করতে গিয়ে জটলা পাকান বিক্রেতাদের কাছে। ফলে সেতু দিয়ে হাটাচলায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীদের। বিশেষত নারী পথচারীদের পড়তে হয় অস্বস্থকির অবস্থায়। গা ঘেঁষাঘেঁষি করতে চলতে হয় তাদের।

পথচারীদের অভিযোগ, সেতুর একাংশ দখল করে হকাররা দোকানপাট বসানোর কারণে মানুষ নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারে না। তবে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, হকারদের উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। তবু তারা আবার দোকানপাট বসান। সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার দেখা গেছে, সেতুর দুই পাশ দখল করে কয়েক’শ হকার নানা ধরণের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সেসব পণ্য দরদাম করে কিনছেন অসংখ্য ক্রেতা। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে সেতুর উত্তর থেকে দক্ষিণাংশের শুরুর বাঁ পাশে তুলনামূলকভাবে ভিড় বেশি। ওই অংশে জটলাও বেশি।

কিনব্রিজের উপর দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন নগরীর দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা গ্রামের সেলিম আহমদ। তিনি দৈনিক সংগ্রামকে জানান, হকারদের কারণে এই ব্রিজ দিয়ে আমাদের পায়ে হেঁটে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে, তার সাথেই তো আছে ছিনতাইকারী। এরমধ্যে ব্রিজের উপরে অনেকগুলো বৈদ্যুতিক বাল্ব দীর্ঘদিন থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ছিনতাইকারীদের জন্য সোনায় সোহাগা। সেলিম আহমদের মতো অনেকেই হকার উচ্ছেদ করে পথচারীদের চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানান যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট। সেতুর আশপাশের এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, সেতুতে অস্থায়ী দোকানপাট থাকায় ময়লা-আবর্জনাও ছড়িয়ে পড়ছে সেতুতে। এ ছাড়া সেতুর প্রকৃত সৌন্দর্যও আড়াল হয়ে যাচ্ছে। সেতুর দক্ষিণাংশে সিলেটের সবচেয়ে বড় বাসস্ট্যান্ড কদমতলী বাস টার্মিনাল ও সিলেট রেলস্টেশন। এ সেতু দিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা মানুষের উত্তরাংশে অর্থাৎ মূল শহরে ঢুকতে হয়। তাই সেতুটি হকারদের দখলে থাকায় বিষয়টি পর্যটকদের কাছেও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে বলে অনেকে মতামত দেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার নূর আজিজুর রহমান জানান, নগরীর ফুটপাতের ন্যায় কিনব্রিজের উপরও ভাসমান হকারদের বিরুদ্ধে প্রায়ই সিসিক অভিযান চালায়, মালামাল জব্দ করে সিটিতে নিয়ে আসে, জরিমানাও করা হয়। এতকিছু করার পরও হকাররা পুনরায় ব্যবসা সাজিয়ে বসে যায়। এখন বিষয়টি আরও কড়াকড়িভাবে দেখা হবে বলে জানান সিসিকের এই কর্মকর্তা।