স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুরঃ

শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও প্রগতির প্রতীক বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবময় অঙ্গীকারের ধারাবাহিকতায় গাজীপুরে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে জুন-২০২৫ এর নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে গাজীপুর পুলিশ লাইনে এক অনাড়ম্বর কিন্তু মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ও সভাপতি, টিআরসি নিয়োগ কমিটি জুন-২০২৫, ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক, নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) ও সদস্য, টিআরসি নিয়োগ কমিটি জুন-২০২৫, মোঃ সোহেল রানা এবং কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সদস্য, টিআরসি নিয়োগ কমিটি জুন-২০২৫, মোঃ তোফাজ্জল হোসেন।

চূড়ান্ত ফলাফলে গাজীপুর জেলায় ৪৭ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং আরও ৫ জনকে ওয়েটিং লিস্টে রাখা হয়েছে। নাম ঘোষণা হওয়ার পর প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই আনন্দে কেঁদে ফেলেন। উচ্ছ্বাসে মুখচ্ছবি, চোখের জল ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের শব্দে পুরো অনুষ্ঠানটি আবেগময় হয়ে ওঠে।

উত্তীর্ণ প্রার্থী মেহেদী হাসান জীবন বলেন, “তৃতীয়বারের চেষ্টায় আমি সফল হয়েছি। মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে চাকরি পেয়েছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন পুলিশের মর্যাদা রক্ষা করতে পারি।”

কানিজ সুবর্ণা কেয়া জানান, “কোন টাকা-পয়সা বা ঘুষ ছাড়াই আমার চাকরি হয়েছে। সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ।”

ভাওয়াল মির্জাপুরের জুতা সেলাইয়ের শ্রমিকের ছেলে তাপস রবি দাস বলেন, “আমার স্বপ্ন ছিল পুলিশের চাকরি করা। আজ আমার এবং পিতার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মাত্র ১২০ টাকার বিনিময়ে নিজের যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে চাকরি পেয়েছি। আমি সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করছি এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”

কাপাশিয়ার সামিয়া জানান, “আমার মা মারা যাওয়ার পর দুই বোনকে দত্তক দেওয়া হয়, আমি নানু-নানীর কাছে বড় হয়েছি। আমার বাবার মাকে মারার অপরাধে জেল হয়েছিল, জেল থেকে বের হয়ে সে দ্বিতীয় বিয়ে করে আমাদের ছেড়ে চলে যায়। শৈশবের কষ্টের পরও আমি আজ চাকরিতে সফল হয়েছি। এই সুযোগ পেয়ে আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করছি।”

প্রধান অতিথি গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ও সভাপতি, টিআরসি নিয়োগ কমিটি জুন-২০২৫, ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক বলেন, “আমাদের দায়িত্ব ছিল এই নিয়োগ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। মহান আল্লাহর কৃপায় আমরা সফল হয়েছি। প্রাথমিকভাবে ৪৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টেস্টে উত্তীর্ণ হলে চূড়ান্ত নিয়োগপত্র পাবেন, আর ওয়েটিং লিস্ট থেকে প্রার্থীদের নেওয়া হবে। কোন তদবির বা প্রভাব আমাদের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারেনি।”

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, যোগ্যতা ও দক্ষতা বজায় রেখে সম্পন্ন হওয়ায় জেলা পুলিশ আরও শক্তিশালী ও উদ্যমী হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।