জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গত বছরের ৩১ জুলাই কেন্দ্র ঘোষিত মার্চ ফর জাস্টিস চলাকালে খুলনায় হত্যার উদেশ্য ছাত্র-জনতার উপর হামলার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩ চাচাতো ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেল, সাবেক মন্ত্রী, এমপিসহ ৫৫ জন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে খুলনায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পী মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন। রোববার (১৭ আগস্ট) আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

মামলার আবেদনে উল্লেখিত আসামিরা হলেন, কেসিসি’র সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, যুবলীগ নেতা শেখ সোহেল, সাবেক সংসদ সদস্য নারায়ণচন্দ্র চন্দ, সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু, সাবেক সংসদ সদস্য রশীদুজ্জামান মোড়ল, রইজ হাওলাদার, এডভোকেট সাইফুল ইসলাম, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহাজালাল সুজন, সাবেক কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল হক, খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) খুলনার ইকবাল বাহার চৌধুরী, সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন, সাবেক এডিসি গোপিনাথ কানজিলাল, সাবেক ডিবি কর্মকর্তা নুরুজ্জামান, জহিরুল ইসলাম, আমজাদ, আবুল কালাম আজাদ, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম, ঢামেক’র ছাত্রলীগের ক্যাডার ডা. সিয়াম, ছাত্রলীগ ক্যাডার ও পরিচালক ডিএমসি স্কলারস ডা. মঈনুল, শেখ ওমর আলী, আবজাল শিকারী, মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, রতন সরদার, সোহেল হাসান রুমি, ২৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডন, স্বেচ্ছাসেবকলীগ খুলনা মহানগর সভাপতি আসাদুজ্জামান রাসেল, কেসিসি’র সাবেক ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাহাদাত হোসেন মিনা, ইসমাইল, শিপার, এবিএম সাত্তার, মো. মিজান শেখ, শফিকুল ইসলাম, রতন মন্ডল, মো. জসিম শিকদার, মো. সাবুদ্দিন, মোহাম্মদ শিকদার, নাসির, মো. খায়রুল বাসার, মো. নাজির হোসেন, মো. কামাল হোসেন, মো. শরিফুল ইসলাম, শাহাজাদা খান, নজরুল ইসলাম, শরীফ আতিয়ার রহমান, রাজ্জাক, সুজা, সৈয়দ মুরসালিন প্রিন্স এবং শেখ শামীম।

মামলায় বাদী এজহারে উল্লেখ করেন, হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই দুপুর আনুমানিক ১২ টায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত মার্চ ফর জাস্টিস বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের একটি মিছিল খুলনা সদর থানাধীন সাত রাস্তা মোড়ে পৌঁছালে ১ হইতে ১০ নং আসামীর নির্দেশে সর্টগান, পিস্তল, বোমা, রামদা, হকস্টিক ইট লোহা সহ ছাত্র-ছাত্রীদের মিছিলে হামলা করে। ১১, ১২, ১৩, ২৩, ৩৩, ৩৮ নং আসামীদের হাতে থাকা সর্টগান দিয়ে খুন করার উদ্দেশ্যে মিছিল লক্ষ্য করিয়া গুলী করে। ২২,২৫,২৬,৩৫,৪০,৪৭,৪৮ নং আসামীদের হাতে থাকা পিস্তল দ্বারা খুন করার উদ্দেশ্যে গুলী করে। ২৭, ১৫, ২৮, ২৯, ৩৪, ৪২, ৪৩ নং আসামীর হাতে থাকা বোমা দ্বারা খুন করার উদ্দেশ্যে মিছিলে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ৩০, ৩১, ৩২, ৩৮, ৪০, ৪৪, ৪৫, ৪৬,৪৭ নং আসামীদের হাতে থাকা রামদা এবং অজ্ঞাতনামা আসামীদের হাতে লোহার রড, হকিস্টিক, ইট, লাঠিসোটা লইয়া মিছিলের উপর ঝাপিয়ে পড়িয়া মিছিলে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের রক্তাক্ত জখম করেন। ১৫/২০ জন আহত হয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

আসামীদের হঠাৎ আক্রমনে মিছিলে অংশ গ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রী প্রাণ ভয়ে, এদিক ওদিক ছোটাছুটি করিতে থাকে। রাস্তায় পড়ে থাকা রক্তাক্ত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সাক্ষীগণ আশপাশের ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও সাক্ষীগণসহ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হামলা করে। গরীব নেওয়াজ ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গেলে ৮ এবং ৩৬ নং আসমাীদ্বয় ছাত্র-ছাত্রীদের ধরিয়া মারধর করিয়া পুলিশভ্যানে তুলে দেয়। আসামীরা পরস্পর যোগসাজসে একই উদ্দেশ্যে বেআইনী সমাবেশে মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনকে নিস্তব্ধ করার লক্ষ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের মিছিলে এলোপাতাড়ি হাত বোমার বিস্ফোরণ আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলীবর্ষণ, দেশীয় অস্ত্র দ্বারা খুনের উদ্দেশ্যে জখম করে।

মামলার বাদী সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আমরা সাত রাস্তার মোড়ে জড়ো হইলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের যারা আমার শত শত বন্ধুকে রক্তাক্ত করেছিল তারা আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভ্যুত্থানের এক বছর পরও ওরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। বাধ্য হয়ে আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আমি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট কামাল হোসেন বলেন, হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মহানগর দায়রা জজ আদালত রোববার মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।