নোয়াখালী সংবাদদাতা : আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার আরেকটা বড় কারণ ছিলো শিক্ষকদের ক্লাসবিমূখ হওয়া। শিক্ষকরা ক্লাসে না গিয়ে রাজনৈতিক আড্ডায় বেশি সময় দিতেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাস এবং গবেষণার চেয়ে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো রাজনৈতিক আড্ডা দেওয়া।বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দির ভিতর রাজনীতি আনবেন না। রাজনৈতিক অঙ্গনে আপনাদের মত যোগ্য লোকের প্রয়োজন। কিন্তু তার জন্য শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া উচিত হবে বলে মন্তব্য করেন, -শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার।
গতকাল সোমবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ১৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন অডিটোরিয়ামে রিসার্চ ফেয়ার ও একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, গত ১৭ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে দুমড়েমুচড়ে ফেলেছে। আমাদেরকে নাগরিক থেকে অধিকারহীন জাতিতে পরিণত করতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছিলো। গুম-খুনের রাজনীতির মধ্য দিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপরাজনীতির মাধ্যমে শিক্ষার মান নষ্ট করা হয়েছে। গণরুম এবং গেস্ট রুমের মাধ্যমে নবীণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হতো। প্রটোকল শিখানোর নাম দিয়ে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হতো। আমাদের তরুন সমাজ অন্যায় এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছে। তারা ফ্যাসিস্টের পতন ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথ তৈরী করে দিয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা রক্ষা করতে সবকিছু নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। বৈষম্য দূর করার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হলো শিক্ষা। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চিন্তার বিপ্লব ঘটাতে হবে। গবেষণায় আমাদেরকে বেশি সময় দিতে হবে। আমাদের সম্পদের অপ্রতুলতা আছে সত্যি, তবে আমাদের ইচ্ছাশক্তির কোনো কমতি নেই। চাইলে আমরা সবাই মিলে এই বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবো।
নোবিপ্রবি ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইলের সভাপতিত্বে উক্ত প্রোগ্রামে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ড. মোঃ রেজুয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ (মুরাদ), নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট ডিআইজি মোঃ হায়দার আলী খান, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ, নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল্লাহ আল ফারুক সহ নোবিপ্রবি ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ। উক্ত প্রোগ্রামে শিক্ষা এবং গবেষণায় অনন্য অবদান রাখায় মোট ১০১ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী রিসার্চ ফেয়ারের আয়োজন করে নোবিপ্রবি প্রশাসন।
এর আগে সকাল ১১ টায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন, রিসার্চ ফেয়ার ও একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ উপলক্ষ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলণ, সাদা পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে ২য় দিবসের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোহাম্মদ রফিকুল আবরার। এছাড়া তিনি নোবিপ্রবির ছাত্র-ছাত্রীদের গার্ড অব অনার গ্রহণের পর জুলাই কর্ণার, নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতিসহ বিশ^বিদ্যালয়ের সকল স্টলগুলি পরিদর্শন করেন ও রিসার্চ ফেয়ার উদ্বোধন এবং রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড, ডিনস অ্যাওয়ার্ড ও ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান এবং বিকেলে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির রিসার্চ প্রেজেন্টেশন এবং সর্বশেষ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেন।